যে সোজা পথে চলে না, মার প্যাঁচ করে দিন কাটে সে কুট্টনী........কুটনী৷ এই কুট্টনীর স্বভাবসংক্রান্ত ব্যাপারকে বলব কৌট্টনী বা কৌট্টনিক৷ কুট্টনীূণ্ঞ্চকৌট্টনী আর কুট্টনীূঠক্ঞ্চকৌট্টন্৷ এই মার প্যাঁচ সংক্রান্ত বিদ্যাকে বলা হয় কুট্টনী বিদ্যা বা কৌট্টনী বিদ্যা৷ যারা গোমরামুখো, যারা ‘‘রাম গরুড়ের ছানা হাসতে তাদের মানা’’ তাদের সম্বন্ধে কথ্য বাংলায় বলা হয় কুট্টনী–মুখ৷
এ প্রসঙ্গে আমার একটি পুরোনো গল্প মনে পড়ে যাচ্ছে৷
আমার বিশেষ পরিচিত জনৈক রেল–ফিসার ছিলেন–ধরো, তাঁর নাম গোবর গণেশ গায়েন৷ ভদ্রলোক সব সময় মুখ বেঁকিয়েই থাকতেন৷ আমি যখন লোকের আড়ালে বলতুম–‘‘হ্যাঁরে, অমন গোমড়া মুখ করে থাকিস কেন’’ সে বলত–‘‘হাসলে লোকে আমার মাথায় চড়ে বসবে, আমাকে মানবে না৷’’
আমি বলতুম–‘‘আচ্ছা না হয় হাসলি না, কিন্তু কথা বলিস না কেন’’ সে বলত–‘‘কথা বললে সস্তা হয়ে যাব৷’’
আমি বলতুম–‘‘সেজন্যে তুই দূরে থেকে খাস্তা থাকতে চাইছিস’’ সে না হেসে বলত–‘‘হ্যাঁ’’৷
একবার আমাদের একটা ৰড় রকমের পিকনিক হয়েছিল৷ পোলাও–কালিয়া ও ভাল–মন্দ খাবারের এলাহী ব্যাপার৷ কাশী থেকে এসেছিল লাউয়ের আকারের প্রকাণ্ড প্রকাণ্ড শীতের বেগুন৷ রান্নাবান্না হয়ে যাবার পর দেখা গেল পঞ্চাশ/ষাটটা ৰড়ৰড় বেগুন ৰাড়তি হয়েছে৷ সবাই মিলে ঠিক করা গেল এই বেগুনগুলো পুড়িয়ে পোলাও–কালিয়ার মাঝে মাঝে খেয়ে মুখ পালটে নেওয়া যাবে৷ যেমন ভাবা তেমনি কাজ৷ খেতে বসে প্রথমেই পরিবেশন করা হ’ল বেগুন পোড়া৷ সবাইকে উৎসাহ দেবার জন্যে শ্রীমান গোবর গণেশ গায়েনের মুখ ফসকে বেরিয়ে গেল–‘‘বাঃ, বেগুনপোড়াটা ফার্স্ট–ক্লাস হয়েছে৷’’
আর একজন বললে–‘‘না, ফার্স্ট–ক্লাস নয়, এয়ার–কণ্ডিশণ্ড্ হয়েছে৷’’ গোবর গণেশ আবার কথা বলে ফেললে৷ সে একটু গম্ভীরভাবে বললে–‘‘যাই হোক, খেতে ভালই হয়েছে৷’’ তার কথা লুফে নিয়ে আমার আর একটু ৰেশী পরিচিত শ্রীসমর সেনগুপ্ত সুযোগের তিলমাত্র অপব্যয় না করে গোবর গণেশকে উদ্দেশ্য করে বললে–‘‘বেগুনপোড়া যখন একবার ভাল লেগেছে স্যার তখন দেখবেন ওই পোড়ার মুখে বাকীগুলোও ভাল লাগবে৷’’
গোবর গণেশ ঠাট্টাটা না ৰুঝে আরও গম্ভীরভাবে ভোজনে মনোনিবেশ করলে৷
এই কুটনী স্বভাবের লোকেদের কেউই পছন্দ করে না৷ ওরা যেমন লোককে অবহেলা করে, লোকেও তেমনি সুযোগ ৰুঝে ওদের বিশ কথা শুনিয়ে দিতে ছাড়ে না৷ তোমরা কিছুতেই এই ধরনের কুট্টনী ৰুদ্ধিকে প্রশ্রয় দিও না৷ এতে সমাজেরও ক্ষতি, তোমাদেরও ক্ষতি৷
সাড়ে চার ভাই
বিদুষকের কথা বলতে গিয়ে সেই চার ভাইয়ের কথা মনে পড়ে গেল৷ আর চার ভাইয়ের কথা বলতে গিয়ে সাড়ে চার ভাইয়ের কথাও মনের কোণে ভাসছে৷ সেকালে ভারতের কোন একটি তীর্থে আমাদের পারিবারিক পাণ্ডা যাঁরা ছিলেন তাঁদের পারিবারিক পরিচয় ছিল শালগ্রাম ভাণ্ডারী পাণ্ডা সাড়ে চার ভাই৷ আমি তখন ছোট৷ ভাণ্ডারী পাণ্ডাকে অর্থাৎ বড় ভাইটিকে শুধোলুম–আচ্ছা, আপনারা সাড়ে চার ভাই কেন আমি তো দেখছি আপনারা পাঁচ ভাই৷
পাণ্ডাজী একগাল হেসে বললেন–‘‘এই দেখ না খোকাবাবু, আমি একজন ঃ এক আর মেজভাই একজন ঃ দুই আর সেজভাই একজন ঃ তিন আর ন’ভাই একজন ঃ চার আর ছোটভাই আধজন ঃ সাড়ে চার৷’’
আমি পাণ্ডাজীকে শুধোলুম–‘‘আপনার ছোট ভাইকে ‘আধজন’ কেন বলছেন তার উচ্চতা তো আপনার চেয়েও বেশী৷’’
পাণ্ডাজী আবার একগাল হেসে বললেন, ‘‘আমরা চারজন যে বিয়ে করেছি, তাই আমরা একজন বলে হিসেবে আসছি৷ আর ছোটটির তো এখনও বিয়ে হয়নি, তাই সে ‘‘আধ জন’’৷