ক্ষৌরকার্য জলের সাহায্যে নির্বাহিত হত ৰলে ক্ষৌরী বা ক্ষৌরকার্যকে প্রাচীন সংস্কৃতে ‘আপ’ ৰলা হত৷ ‘অপ্’ মানে জল৷ তার থেকে ‘আপ’৷ এই ‘অপ্’ থেকে ফার্সীতে ‘আৰ্’৷ পন্জূআৰ্ঞ্চ পঞ্জাৰ্৷ ফার্সীতে ‘পন্জ্’ মানে পাঁচ৷ জলের সাহায্য ব্যতিরেকে খুৰ কম কাজই করা যায়৷ তাই সংস্কৃতে ব্যাপকার্থে ‘আপ’ মানে সৰ রকমেরই কর্ম৷
যস্মিন্নাপো মাতরিশ্বা দধাতি–(বেদ)
বিশেষার্থে ‘আপ’ মানে দাড়ি কামানো৷ ঠিক তেমনি ‘বা’ ধাতু ‘ড’ প্রত্যয় করে যে ‘ব’ শব্দ পাই তারও একটি অর্থ হ’ল ক্ষৌরকার্য৷
‘ব’ ৰলতে গিয়ে একটা ছোট্ট গল্প মনে পড়ল৷ তোমরা ৰাগৰাজারের গঙ্গার ঘাটে গিয়ে দেখেছ নিশ্চয়, সারি সারি নাপিত ৰসে রয়েছে৷ যার দাড়ি কামাবার আছে সে উবু হয়ে ৰসে পড়ছে, আর নাপিত–ভায়া তার ‘ব’–কাজ করে দিয়ে যাচ্ছে৷ সময়ে সময়ে ৰন্ধুর দিকে তাকিয়ে ৰলছে–এই নিয়ে আঠাশটা দাড়ি হ’ল৷ আর দু’টো দাড়ি হলেই বাড়ী ফিরছি৷ রেস্তোরাঁয় যেমন শুণতে পাও, ‘ওই দিকে চারটে চা নিয়ে যা’৷ যাই হোক্, কোনো ৰনেদী লোক এসে পৌঁছুলে নাপিত–ভায়া তখন তাকে ৰসবার জন্যে ইট অফার করত৷ এই ইটে বসে দাড়ি কামানোকে ৰলা হত ইটালিয়ান সেলুন৷
১৯৩৯–৪০ সাল অবধি দেখেছি যাঁরা উবু হয়ে বসে দাড়ি কামাতেন নাপিত–ভায়া সাধারণ ঠান্ডা জল দিয়ে তাঁদের দাড়ি কামিয়ে দিতেন আর দক্ষিণা নিতেন এক পয়সা৷ আর যাঁরা ইটালিয়ান সেলুনে ৰসতেন তাঁদের সাৰান–মিশ্রিত গরম জল দিয়ে দাড়ি কামিয়ে দেওয়া হত৷ নাপিত–ভায়া তাঁদের কাছে প্রণামী নিতেন দু’পয়সা৷
এই প্রসঙ্গে মনে পড়ে গেল গেঁজেলদের গল্প৷ যখন কোনো নবাগত, গেঁজেল হবার জন্যে শিক্ষানবিশ (এ্যাপ্রেন্টিস) হিসেৰে গেঁজেল ক্লাৰের সদস্য হয় তখন গোড়ার দিকে তাকে উৰু হয়ে ৰসে গাঁজায় দম টানতে হয়৷ এই উৰু হয়ে ৰসা অবস্থায় তাদের ৰলা হয় উৰু–গেঁজেল বা এ্যাপ্রেন্টিস–গেঁজেল৷ তারপর গেঁজেলদের যোগ্যতার একটা পরীক্ষা হয় যাকে ৰলতে পারো যোগ্যতা–পরিমাপক পরীক্ষা (suitability test or efficiency test) সেই যোগ্যতা–পরীক্ষায় যে উত্তীর্ণ হয় সে তখন থেকে বসবার জন্যে ইট পায়৷ ইটে বসার পর থেকে আর তাকে উৰু–গেঁজেল ৰলা হয় না–ৰলা হয় ইটালিয়ান গেঁজেল৷ একবার ভাগীরথীর তীরে (ডান তীর না বাঁ তীর মনে পড়ছে না৷ ডান তীর হলে ৰর্দ্ধমান জেলা, বাঁ তীর হলে নদীয়া জেলা) গেঁজেলদের সভা ৰসেছে একটা মাদার*(*কলকাতায় আমরা ৰলি মাদার, ২৪পরগণা ও মেদিনীপুর জেলায় ৰলে ড্যাফল৷ রাঢ়ের কোথাও কোথাও ৰলে ডেলো বা ডাউয়া৷ খণার বচনে আছে–‘‘শোণরে ৰলি চাষার পো৷ বাঁশ ৰনের ধারে মান্দার রো৷’’ রবীন্দ্রনাথ লিখছেন, ‘‘আঁধার হল মাদার গাছের তলা৷’’) গাছের তলায়৷ অনেকগুলো উৰু গেঁজেল ক্রমাগত দাবী জানিয়ে আসছিল–তাদের যোগ্যতার পরীক্ষা নেওয়া হচ্ছে না৷ এর ফলে তাদের ইটালিয়ান গেঁজেল হবার সুযোগ থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে৷ এতে তাদের প্রতিভাকে দাৰিয়ে রাখা হচ্ছে, মানবতার বিকাশ ব্যাহত হচ্ছে৷ গেঁজেল–সর্দার ছিলেন শ্রীযুক্ত ৰাৰু দমফাটা সিং৷ তিনি ৰললেন–‘‘ঠিক আছে, তাহলে আজকেই পরীক্ষাটা হয়ে যাক্৷’’
দমফাটা সিং ৰললেন–‘‘গাঁজার প্রথম টান দেবার সময়েই একটা ভাব নিতে হৰে৷ কার ভাবটি কতখানি মঞ্চসার্থক হচ্ছে তারই ভিত্তিতে তাকে খেতাৰ দেওয়া হৰে ও ইট দেওয়া হৰে৷’’
গেঁজেলরা ৰললে–‘‘একটু ৰুঝিয়ে ৰলুন, আরও একটু খোলসা করে, একটু ব্যাখ্যা করে ৰলুন৷ তাতে আমাদের খোলতাইটা মানাৰে ভাল, মৌতাতটা শানাৰে ভাল৷’’
সর্দার গেঁজেল ৰললে–‘‘এই ধরো, কেউ গোরুর ভাব নিলে৷ তার সামনে যদি একশ’ টাকার নোট রাখা হয় সে সঙ্গে সঙ্গে নোটটা চিৰোতে থাকৰে, মাথা নাড়তে থাকৰে, শিঙ্ দিয়ে গুঁতোতে যাৰে আর হাম্বা হাম্বা আবাজ করতে থাকৰে৷ কেউ শো’রের ভাব নিলে৷ সে সঙ্গে সঙ্গে কাছাকাছি জায়গায় যত কচুগাছ দেখবে আর মুখে আবাজ করতে থাকৰে ‘‘ঘোঁৎ ঘোঁৎ ঘোঁৎ–রতনে রতন চেনে শো’রে চেনে কচু.......ঘোঁৎ ঘোঁৎ ঘোঁৎ৷ কেউ হয়তো ভোঁদড়ের ভাব নেৰে৷ সে সামনের হাত দু’টো পায়ের মত করে ছুটতে ছুটতে জলে ঝাঁপ দেৰে আর মুখে করে মাছ ধরৰে৷ নাম জিজ্ঞেস করলে ৰলৰে, ‘‘ভোঁ...ভোঁ...ভোঁ৷’’ গেঁজেলদের ভাষায় একে ৰলা হয় ভাব নেওয়া৷’’
সৰ যখন তৈরী, পরীক্ষারম্ভের ঘণ্টী যখন ৰাজে ৰাজে এমন সময় উৰু–গেঁজেল ঘণ্টাকর্ণ ঘোড়ইয়ের পিতৃদেব লম্বাকর্ণ হঠাৎ সেখানে এসে হাজির ৷ কম বয়সে তারও গেঁজেল–জীবনের অভিজ্ঞতা ছিল৷ তাকে দেখার সঙ্গে সঙ্গে সর্দার–গেঁজেল দমফাটা সিং ঘণ্টাকর্ণকে ৰললে–‘‘ওই দেখ, তোর ৰাপ্ আসছে৷ তুই এখন যদি মানুষ সেজে থাকিস তাহলে তোকে কথার উত্তর দিতে হৰে৷ তাই তুই এখন তাড়াতাড়ি কোনো পশু–পক্ষী বা জন্তু–জানোয়ারের ভাব নিয়ে নে৷’’ ঘণ্টাকর্ণ সঙ্গে সঙ্গে টিয়াপাখীর ভাব নিয়ে নিলে৷ লম্বাকর্ণ এসে ৰললে–‘‘চল্ ঘণ্টাকর্ণ, বাড়ী চল্৷ সারাদিন শুধু টো টো করে ঘুরে ৰেড়ানো আর গাঁজা খাওয়া৷ এখন চাষের সময়.......ধান রোয়ার কাজ চলছে, বাড়ী চল্৷ ঘণ্টাকর্ণ মুখটা ছুঁচলো করে টিয়াপাখীর মত কুট কুট করে ছোলা কাটতে লাগল আর ৰলতে লাগল–‘‘ট্যাঁ ট্যাঁ ট্যাঁ’’৷
লম্বাকর্ণ ৰললে–‘‘ঢ়ঙ শিখেছে ! টিয়াপাখীর ভাব নিয়েছে! দেখাচ্ছি মজা!’’ লম্বাকর্ণ তখন মুখে করে ঘণ্টাকর্ণের ঘাড়টা কামড়ে ধরলে আর তারপর হুলো বেড়ালের ভাব নিয়ে ৰললে, ‘‘ম্যাঁও, ম্যাঁও, ম্যাঁও৷’’
ঘণ্টাকর্ণ তো টিয়াপাখী সেজেছে৷ ৰেড়াল তার ঘাড় ধরেছে৷ তাই সে আরও একবার ট্যাঁ ট্যাঁ শব্দ করে ঘাড়টি কাৎ করে নেতিয়ে পড়ল৷ ৰেড়ালরূপী লম্বাকর্ণ টিয়াপাখীরূপী ঘণ্টাকর্ণকে টেনে হিঁচড়ে নিয়ে গেল৷
যাইহোক্ দাড়ি কামানোর কথা ৰলতে গিয়ে ইটালিয়ান সেলুনের কথা এসে গেল আর সেই প্রসঙ্গে এসে গেল ইটালিয়ান গেঁজেলের কথা৷ তোমরা সুযোগ পাও তো একবার দমফাটা সিংয়ের কাছে গিয়ে খোঁজ নিও৷ এই ঘটনার পরে ঘণ্টাকর্ণ গেঁজেল সভায় আর আসত কিনা বা এসে থাকলে সে ইটালিয়ান গেঁজেল ৰলে গণ্য হয়েছিল কিনা, হ্যাঁ, জেলাটা ৰর্দ্ধমান না নদীয়া, সেটাও সেই সঙ্গে খোঁজ নিয়ে রেখো৷