প্রভাতী

সূর্য প্রণাম

লেখক
কৌশিক খাটুয়া

স্বদেশ প্রেমের অগ্ণিমন্ত্রে

            দীক্ষিত যেই জন,

পার্থিব সুখ তুচ্ছ করিয়া

            গৃহীত মাতৃমুক্তি পণ৷

বিবাহ বন্ধন ছিন্ন নয়কো

দৃঢ় করেছে সে বাঁধন,

পাশে নাই তবু ছিল যে তাঁহার

অকুন্ঠ সমর্থন৷

প্রথম দেখাই অন্তিম দেখা

মিলেছে নয়নে নয়ন,

দেশ মাতার চরণে অঞ্জলী দানে

তাইকি পুষ্প চয়ন!

 

অগ্ণিসাক্ষী পুষ্পাঞ্জলি

ভারত মাতার চরণে,

দেশের লাগিয়া তুচ্ছ জীবন

প্রস্তুত মৃত্যু বরণে৷

তব আহ্বানে প্রকাশ্যে গোপনে

উদ্‌বুদ্ধ যুব সমাজ,

ত্যাগের মন্ত্রে নিবেদিত প্রাণ

হৃদয়ে করে বিরাজ৷

 

হে বিপ্লবী বীর উঁচু তব শির

মধ্য গগনে সূর্য

বঙ্গ-হৃদয়ে বাজালে দামামা

বাজিল রণতুর্য৷

বিপ্লবীদের সেনাপতি তুমি

নব প্রজন্মের আদর্শ,

তোমায় স্মরণে মননে বরণে

প্রনামে ভারতবর্ষ৷

 

নেতাজী

লেখক
 জয়তী দেবনাথ

শতকোটি প্রণাম তোমায়

ধন্য তুমি বীর৷

এই ভারতের গর্ব তুমি ৷

উচ্চ তোমার শীর৷৷

                        তোমার জ্যোতিতে উজ্জ্বল হল

                        এই ভারত-গগন৷

                        দেশমাতার সেবায় তুমি

                        সঁপিলে তনু-মন৷৷

            তোমার কীর্তিতে মুগ্দ আজি

সকল ভারতবাসী৷

ভারত-গীতে বাজে আজও

তোমার মধুর বাঁশী৷৷

                        হে বীর তুমি আজও আছ

                        সবার বরণীয়

                        যুগে যুগে থাকবে তুমি

                        হয়ে স্মরণীয়৷৷

তোমার ছোঁয়ায় ধন্য হ’ল

এই ভারতের ভূমি,

সবার হৃদয় জুড়ে সদা

থাকবে মহান তুমি৷

                        তুমিই মোদের পাথেয় হবে

                        ওগো সুধী পথিক,

                        মতানৈক্যের এই যুগে

                        তোমার পথই সঠিক৷৷

 

নেতাজী প্রণাম

লেখক
জ্যোতিবিকাশ সিন্‌হা

নেতাজী, নেতাজী, আজাদ হিন্দ্‌ বাহিনীর নেতাজী

নেতাজী, নেতাজী, সকলের আদরের নেতাজী

বাঙলার মহান সন্তান তুমি, ভারতের গৌরব

বিশ্বনিখিলে সততঃ স্পন্দিত তোমার স্বদেশপ্রেমের সৌরভ

শতাব্দীর ধ্রুবতারা তুমি, যুগপুরুষ মহাবিপ্লবী

ত্যাগ-মন্ত্র বলে ভারতবাসীর বুকে এঁকেছিলে দেশাত্মবোধের  ছবি

আসমুদ্র হিমাচল হয়েছে উত্তাল তোমারই অমোঘ আহ্বানে

লক্ষ লক্ষ বীর সৈনিক জেগেছে ‘জয় হিন্দ্‌’ গানে

বিদেশী শাসকের অমানুষিক নিপীড়ন আর পৈশাচিক অট্টহাস

কলঙ্কিত করেছে পৃথিবী ও সভ্য মানুষের ইতিহাস৷

অন্ধঘোর নিশীথের বক্ষ চিরে রক্তিম পূবের আকাশ

উদ্‌ভাসিত করলে যুগ সন্ধিক্ষণে, তুমি, সুভাষ৷

পুষ্পশোভিত নিঃশঙ্ক  জীবনের হাতছানি দিয়েছ বিসর্জন

কণ্টকাকীর্ণ রক্তাক্ত দুর্গম পথ হাসিমুখে করেছ বরণ৷

গগনভেদী হুঙ্কারে ভেঙেছে অত্যাচারীর পাষাণ কারাগার

কেঁপেছে শার্দূল-শয়তান, দুর্বার শক্তিতে তোমার

লালচক্ষু-ভ্রূকূটি অবহেলে, ধূর্ত শ্যেন দৃষ্টি দিয়েছ ফাঁকি

অভ্রংলেহী মদমত্ত বোঝেনি, তুমি বিধাতার এক অপূর্ব সৃষ্টি৷

তরুণ সমাজের আদর্শ তুমি, চির উন্নত শাশ্বত মৃত্যুঞ্জয়

যুব-মানসে যুগে যুগে সঞ্চার’ পৌরুষ অমর অক্ষয়৷

শুভ জন্মদিনে স্মরণে-বরণে জানাই শতকোটি প্রণাম আজি

নেতাজী, নেতাজী, অফুরন্ত যৌবনের অগ্রদূত নেতাজী

নেতাজী, নেতাজী, আপামর দেশবাসীর গর্বের নেতাজী৷৷

 

খন্খন্ ঝন্ঝন্

Baba's Name
শ্রী প্রভাতরঞ্জন সরকার

গম্ভীর শব্দের অর্থ হ’ল জলের তলমাপক ভাব অর্থাৎ জলকে গম্ভীর বললে বুঝতে হবে সেটা অথই জল....অনেক তলা পর্যন্ত সেই জল গেছে৷ যদিও শব্দটি আদিতে জলপরিমাপক হিসেবেই ব্যবহূত হত কিন্তু পরবর্ত্তীকালে বিভিন্ন ধরণের অলঙ্কারে বিভিন্ন বস্তুর তলমাপকতায় এর ব্যবহার হয়ে এসেছে৷ ভারী আবাজ, ভারী মনমেজাজ, ভারী চাল–চলন, ভারী চলন–বলন, যার মধ্যে অনেক নীচ অবধি বা অনেক ভেতর পর্যন্ত মাপবার প্রশ্ণ ওঠে তার জন্যে ‘গম্ভীর’ শব্দ চলতে পারে৷ বাজখাঁই আবাজ বলতে চলে গম্ভীর আবাজ হাসিবিহীন মুখকে বলব গম্ভীর মুখ অভিব্যক্তিবিহীন আচরণকে বলব গম্ভীর আচরণ মেপে মেপে মাটিতে চাপ দিয়ে দিয়ে চলাকে বলব গম্ভীর চলন৷ তবে মনে রাখতে হবে মুখ্যতঃ এটি জলেরই তলত্ব বা অতলত্বের পরিমাপ৷

‘গম্ভীর’ শব্দের কথা বলতে গিয়ে মনে পড়ে গেল একটি কম বয়সের ঘটনার কথা৷ আমার জানা এক ভদ্রলোক ছিলেন, ধরো তাঁর নাম সৌরেন  সরকার৷ ভদ্রলোকের স্ত্রী ছিলেন দারুণ দজ্জাল, উঠতে বসতে স্বামীকে খোঁটা দিয়ে কথা বলতেন৷ বচনের ঝালে তিনি অন্নপ্রাশনের ভাতকেও বমি করে বার করে দিতে লোককে বাধ্য করতেন৷ কিন্তু সৌরেন সরকার মানুষটি ছিলেন অত্যন্ত ভাল..... একান্তই গোবেচারা৷ *একদিন ভোরে পশ্চিম দিকের পাহাড়টার দিকে বেড়াতে যাচ্ছি৷ দেখি, রাস্তার ধারে বটতলায় বসে রয়েছেন সৌরেন সরকার৷ ভদ্রলোক আমার বাবার চেয়ে বয়সে এক বছরের বড় ছিলেন৷ তাই তাঁকে জ্যাঠামশায় বলতুম৷ তাঁকে ওইভাবে বসে থাকতে দেখে শুধোলুম–কী জ্যাঠামশায়! এখন এখানে এভাবে বসে আছেন!

হ্যাঁ, প্রসঙ্গতঃ বলে রাখি, দেওয়ালে ঠেস দিয়ে থালা বাসন–পত্র যদি রাখা হয়, সেই বাড়ীর কাছ দিয়ে তীব্রগতিতে ছুটে আসা রেলগাড়ীর শব্দে থালা–বাসনপত্র দেওয়ালের গা ছেড়ে যখন মাটিতে পড়ে যায় তখন একটা খন্–খন্ ঝন্–ঝন্ ঝনাৎ শব্দ নিশ্চয়ই শুণেছ৷ আবাজ কেবন বোঝাতে গিয়ে লোকে বলে খন্–খন্ ঝন্–ঝন্ আবাজ৷ এ আবাজ কেবল বাসনেরই হয়, মানুষ বা অন্য জীবের হয় না৷ তবুও এ আবাজটি অনেক সময় মুখর বা মুখরা মানুষের অভিব্যক্তি বোঝানোর সময় ব্যবহূত হয়৷

আমি সরকার জ্যাঠামশায়কে জিজ্ঞেস করলুম–তা অত ভোরে এই বটতলায় বসে থাকার কারণটা কী?

তিনি বললেন–বাবা, সবই তো জানো, বাড়িতে চবিবশ ঘণ্টা খন্–খন্ ঝন্–ঝন্ ৷ তা তোমার জেঠীমার ভয়ে একটু গাছতলায় বসে শান্তি পাচ্ছি৷ খানিক বাদে আবার বাড়ী ফিরতে হবে, তারপর অফিস যেতে হবে, তবু আর দশটা মিনিট বসে থাকি....যতটুকু সময় খন্–খন্ ঝন্–ঝনের হাত থেকে দূরে থাকা যায়৷

 

তাহলে বুঝলে এই ‘গম্ভীর’ শব্দ যদিও জলের পরিমাপের জন্যে প্রাচীনকালে ব্যবহূত হত কিন্তু আজ গম্ভীর স্বভাবের মানুষ, গম্ভীর চালচলন, গম্ভীর চরণ–চারণা, গম্ভীর ধবনিবিন্যাস প্রভৃতি নানান ভাবে নানান ব্যঞ্জনায় নানান অঙ্কনের আঙ্গিকে ব্যঞ্জনার বহ্বাস্ফোটে তরঙ্গের উত্তরণে সত্যিই মুড়ি–মুড়কির মতই ছড়িয়ে পড়েছে৷ শব্দটি তার সাবেকি গাম্ভীর্য আজ হারিয়ে ফেলেছে৷

(শঃ চঃ ২০/১৮)

 

স্বামী বিবেকানন্দ স্মরণে

লেখক
প্রভাত খাঁ

ন্যায়, সত্য মানবতার মূর্ত্তপ্রতীক

বিবেকের আনন্দ তুমি বিবেকানন্দ

তোমার অমৃতবানী জাগায়েছে বিশ্ব সংসারে

একসূত্রে বেঁধে দিতে মানব সমাজে৷

জাতপাত ভেদাভেদ দূরাচারি

আচণ্ডালে ভালবেসে মাটির পৃথিবী পরে

সচেষ্ট ছিলে এক মানব সমাজ গড়ি

তাঁর মনে আনন্দ যোগাতে৷

হে বীর দৃঢ়চেতা  সর্বত্যাগী সন্ন্যাসী

বিশ্ব আত্মায় তুমি প্রতিষ্ঠা করেছো

জগতে অধ্যাত্ম জ্ঞানের বানী দিকে দিকে ছড়ায়ে৷

ক্ষণ জন্মাতুমি, তোমার কর্ম এষণা

তোমাকে প্রতিষ্ঠিত করে গেছে

চিরকাল এ জগৎ সংসারে৷

আজ তুমি নেই মহা কীর্ত্তি তব

জাগ্রত প্রহরী সম সকলের মনে

তোমারে বসায়ে রাখি’ ধন্য করি

রেখে যায় কৃতজ্ঞতা পাশে৷

স্বর্ণগর্ভা এ মহান দেশে

তুমিই চিনায়েছ তাঁরে এ জগতে

এক অধ্যাত্মবাদী স্বদেশ হিসাবে৷

বিশ্ব মন জয় করি’ অধ্যাত্ম প্রেমে৷

 

রোদ

লেখক
প্রণবকান্তি দাশগুপ্ত

ভাল লাগে শীতের দিনে

পায়েস আর পিঠে,

নলেন গুড়ের সন্দেশ আর

খেজুর রস মিঠে৷

ভাল লাগে কড়াইশুঁটির

কচুরি, মালপোয়া---

ভাল লাগে নতুন ধ্যানের

নবান্নে, আমোদ---

সবচেয়ে ভাল লাগে শীতে

সকাল বেলার রোদ!

মান্ধাতা

লেখক
কৌশিক খাটুয়া

আমি সেই নরকুলের

প্রথম রাজা ‘মান্ধাতা’৷

তোমরা কি পেয়েছ সেই

শ্মরণাতীত বারতা!

তারপর থেকে বিশ্বে প্রথম

শুরু রাজতন্ত্র৷

আজও কোনো দেশে পরম্পরায়

রাজদণ্ডই শাসনতন্ত্র৷

 

তোমরাতো জানোনা সেই ইতিহাস,

এও এক নিষ্ঠুর পরিহাস!

ইতিহাসে এ তথ্য অনুল্লিখিত সত্য

আমায় ঘিরে পারিষদবর্গ

পাইক বরকন্দাজ

থাকতো কত অমাত্য৷

আমার সিংহাসন আমারই নির্র্মণ

নির্মমভাবে অস্বীকৃত,

দেয়নি কেহ দাম৷

 

আজও মানুষ বলে কথারচ্ছলে

মানুষ সবাই সুখী ছিল

মান্ধাতার আমলে৷

তারা হাসতো, খেলতো গাইতো গান

 

নাচতো ছন্দে তালে৷

আজ হারিয়ে গেছে সেই সত্যতা

অলিখিত ইতিহাসের অতল তলে৷

খানার মর্ম সবাই বোঝে না

Baba's Name
শ্রী প্রভাতরঞ্জন সরকার

‘কৌশিকা’ শব্দের একটি অর্থ হ’ল রেকাবি, পিরীচ (পেয়ালা–পিরীচ), ডিশ, প্লেট (চায়ের প্লেট), জলখাবারের জন্যে ব্যবহার করা ছোট আকারের কানা–উঁচু থালা, ফুলকাটা থালা, সরা প্রভৃতি৷ প্রাচীন ভারতে এই প্রত্যেকটি জিনিসই ‘কৌশিকা’ নামে পরিচিত ছিল ও জলখাবারের জন্যে এই বাসনই সাধারণতঃ ব্যবহার করা হত৷ প্রাচীন রাঢ়ে রান্না করা জলখাবারের জন্যে ‘কৌশিকা’–ই ব্যবহার করা হত৷ কিন্তু না–রাঁধা জলখাবারের জন্যে ছোট আকারের একপ্রকার পাত্র যাকে ছোট ধুচুনী বা পেত্তে বলা হয় বা বলা হত তা–ই ব্যবহার করা হত৷ রাঢ়ের পণ্ডিতেরা এই জন্যে ছোট আকারের ধুচুনী বা পেত্তের জন্যে সংস্কৃত ‘কৌশিকা’ শব্দ ব্যবহার করতেন৷

পাশ্চাত্ত্য প্রভাবে মানুষ বাঁশ–বেতের ভোজনপাত্রের ব্যবহার কমিয়ে ফেলেছিল৷ বাঙলায় যখন সাহেবরা আসেন তখন ভোজনপাত্র হিসেবে বাঁশ–বেতের আধার ব্যবহূত হত৷ পাশ্চাত্ত্য প্রভাবে বাঙালী যখন একটি ইঙ্গ–বঙ্গ সমাজ গড়ে তুলেছিল এই কলকাতা শহরেরই বিভিন্ন অংশে, ডিরোজিওর প্রতিপত্তি যখন তুঙ্গে সেইরকম সময়ের মানুষেরা সাধারণ বাঙালীর খাদ্যকে ‘খাবার’ তথা ভাল বাঙলায় ‘আহার’ বা ‘ভোজন’ বলত৷ সাহেবী খানাকে তারা ইচ্ছে করেই ‘খানা’ বলতে  শুরু করে৷ বাংলা ভাষায় ‘খানা’ শব্দটি চলে আসছে ৭০০ বছর ধরে ঠিকই কিন্তু ইঙ্গ–বঙ্গ সমাজে ‘খানা’ শব্দটি ব্যবহূত হতে থাকে বিশেষ করে সাহেবী চালের খাবারের জন্যে......আরও বিশেষ করে ভোজ্যে শূকরমাংসের ব্যবহার থাকলে৷ সেই সময়কার একটি ছোট্ট গল্পের কথা মনে পড়ল৷

তোমরা নিশ্চয় অনেকেই জান হুগলী জেলার জনাই ছিল ব্রাহ্মণ পণ্ডিতদের একটি শ্লাঘার বস্তু৷ বেশ সুশিক্ষিত গ্রাম৷ সংস্কৃতের জ্ঞানের জন্যে রাঢ়–বাঙলায় এই জনাবতীপুর (জনাই) অনেকের কাছেই পরিচিত ছিল৷ বৌদ্ধযুগে ও বৌদ্ধোত্তর যুগে বাঙলায় এর প্রভাব দূর দূরান্তে ছড়িয়ে পড়েছিল৷ বৌদ্ধোত্তর যুগের শেষ চরণে জনাই–এরও প্রতিদ্বন্দ্বী জুটে গেল৷ যারা জুটল তারা হচ্ছে পণ্ডিত কায়স্থদের গ্রাম বাক্সা (বাকসারিকা), কৈকালা (কপিত্থকলিকা) ব্রাহ্মণ–গ্রাম ভাণ্ডারহাটী, সিঙ্গুর (সিংহপুর) প্রভৃতি৷ ইংরেজ আমলের মাঝামাঝি সময়ে এদের অনেকে রাক্ষসী ম্যালেরিয়ার আক্রমণে ধ্বংস হতে বসেছিল৷ এখন কেউ কেউ টাল সামলে নিয়েছে.....কেউ আর তা পারেনি৷ সে যুগে এদের সবাইকার মধ্যে চলেছিল একটা বন্ধুত্বপূর্ণ বৈদগ্ধ্য প্রতিযোগিতা৷ প্রাক্–পাঠানযুগের ঠিক পূর্ব চরণে ভাণ্ডারহাটী একটি নামজাদা পণ্ডিত–গ্রাম রূপে পরিচিত ছিল৷ ভাণ্ডারহাটীর তো বটেই, ভাণ্ডারহাটীর কাছাকাছি গ্রামের বসবাসকারী পণ্ডিতেরাও নিজেদের ভাণ্ডারহাটী গোষ্ঠীর মানুষ বলে পরিচয় দিতেন৷ ঠিক তেমনই ভাণ্ডারহাটী গোষ্ঠীর একজন স্বনামধন্য মানুষ ছিলেন বিদ্যাভূষণ বাচষ্পতি৷ বাচষ্পতি মশায় ছিলেন তীক্ষ্ণধী প্রত্যুৎপন্নমতিত্ব সম্পন্ন এক বিরাট পণ্ডিত৷ কাব্য, সাংখ্য, ব্যাকরণ, স্মৃতি সবেতেই ছিল তাঁর সমান দখল৷ অথচ মানুষটি ছিলেন সদালাপি, নিরহঙ্কার৷ দেখে কে বুঝবে, তিনি অত বড় পণ্ডিত৷ কেউ তাঁকে শ্লেষ বর্ষণ করে কথা বললে, ঠোক্কর তুলে ঘা দিলে তিনি তাকে সেইভাবে প্রত্যুত্তর দিতেন না–দিতেন হাস্যরসিকতার মাধ্যমে, বৈদুষ্যমণ্ডিত ভাষায়৷

এহেন বিদ্যাভূষণ বাচষ্পতি মশায় কলকাতায় খুব কমই আসতেন৷ কলকাতার ইঙ্গ–বঙ্গ সমাজের সঙ্গে তিনি মানিয়ে চলতে পারতেন না৷ সংস্কৃত কলেজের পণ্ডিত মশায়রা চাইতেন তিনি কলকাতায় আসুন–তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখুন৷ কিন্তু বাচষ্পতি মশায়ের কলকাতার প্রতি এই অনীহা তাঁদের ব্যথিত করত৷

একবার তিনি কলকাতা এলেন৷ তাঁকে দেখেই ইঙ্গ–বঙ্গ সমাজ কিছুটা বিরক্ত হ’ল.......দুশ্চিন্তাগ্রস্তও হ’ল কারণ বাচষ্পতি মশায় কারোর খাতির রেখে কথা বলতেন না৷ যদিও কথা বলতেন অত্যন্ত ভদ্রভাবে৷ সেবার কলকাতায় দু’চার দিন থেকে গেলেন৷ বাচষ্পতি মশায় এবার গ্রামে ফিরবেন৷ ইঙ্গ–বঙ্গ সমাজ প্রতিপদেই তাঁর উপস্থিতিতে পর্যুদস্ত হয়ে চলেছিল৷ তাঁরা ভাবলেন একবার অন্ততঃ বাচষ্পতি মশায়কে অপ্রতিভ করতে হবে–একটা অন্ততঃ ভাল রকমের ঠোক্কর দিতে হবে৷

ইঙ্গ–বঙ্গ সমাজের কয়েকজন তাগড়া তাগড়া মানুষ শূকর মাংসের খাদ্য খাচ্ছিলেন৷ তাঁরা ভাবলেন, এটাই তো মোক্ষম সুযোগ৷ তাঁরা বাচষ্পতি মশায়কে বললেন–‘‘আচ্ছা বাচষ্পতি মশায়, আপনি তো পাণ্ডিত্যের সমুদ্র–যেমন উদার তেমনই ব্যাপক৷ তাহলে আমাদের সঙ্গে বসে একবার খানা খেয়ে আমাদের কৃতার্থ করে দিয়ে যান৷’’ বাচষ্পতি মশায় এর উত্তরে একগাল হেসে বললেন, ‘‘দেখো, আমি একে হুগলী জেলার গ্রাম্য মানুষ–তার ওপর আবার গরীব৷ আমি তোমাদের ওই খানাটানা চোখেও দেখিনি কখনও........জানিও না, তাই খাই–ও না৷ আমরা গেঁয়ো ভূত৷ আমরা খানা–ডোবায় মলত্যাগই করতে যাই৷’’ বাচষ্পতি মশায় তাঁর স্বগ্রামে ফিরে গেলেন৷

 

কীর্ত্তন-মাহাত্ম্য

লেখক
প্রণবকান্তি দাশগুপ্ত

শোন শোন ভক্তগণ শোন মন দিয়া,

কীর্ত্তন করো গো সবে হৃদয় মথিয়া৷

ৰাৰা নামে ব্রহ্ম নামে ভর মনপ্রাণ,

ৰাৰা নামে যে মাতে গো সে যে বুদ্ধিমান৷

দুই হাত তুলে নাচো ‘ৰাৰা নাম’ বলে,

বিশ্ব জুড়ে সেই দৃশ্য--- দেখুক সকলে৷

‘ৰাৰা নাম কেবলম্‌’ মুক্তিমন্ত্র সিদ্ধ

ৰাৰা নাম ভজ’ পাবে ৰাৰার সান্নিধ্য

প্রাণ খুলে নাচো গাও মৃদঙ্গের তালে

ভক্তিস্রোতে বৈকুন্ঠের দ্বার যাবে খুলে

যেথায় কীর্ত্তনে মাতে যত ভক্তগণ

যোগীর হৃদয় ছেড়ে সেথা আগমণ৷

ভক্তির কাণ্ডারী তিনি--- চিনি বা না  চিনি,

আসবেন আসবেন আসবেন তিনি৷

ৰাৰা নামে ধরাধাম কর মুখরিত,

হয়ো না শঙ্কিত কেউ, হয়ো না লজ্জিত৷

বিদ্যা নয়, বুদ্ধি নয়---শুধু ভক্তি -অর্ঘ্য---

কী আনন্দ, কী আনন্দ, মর্ত্তলোক স্বর্গ৷

ফের বলি, ৰাৰা নামে ভরো মন প্রাণ

ৰাৰা নামে যে মাতে গো সে যে বুদ্ধিমান৷

 

যুগের দাবী

লেখক
কেয়া সরকার

ব্যর্থ হবে না যুগের সাধনা

এ দাবী চিরকালের

গড়বো সমাজ নতুন আদর্শে

এ আশা প্রতি পলের

ভাবজড়তার প্রাচীর ডিঙিয়ে,

শত ভেদাভেদের গণ্ডি এড়িয়ে,

বিশ্ব সমাজ করবো রচনা,

এ আশা প্রতি জনের৷

 

সব বিদ্বেষ, গ্লানি দূর হয়ে,

ভালোবাসা কে পথ করে দেবে

শুভ বুদ্ধিতে জাগ্রত জনে,

আদর্শকে হৃদে ধরে রবে

ঐক্যের সুধা পান করে সবে

মানুষ আবার এক হয়ে যাবে

প্রাউট স্থাপনে পৃথিবীতে আর,

মানুষের কোনো দ্বিধা নাহি রবে৷

 

নব্যমানবতার কোমল স্পর্শে,

মানুষের যবে চোখ খুলে যাবে

হৃদয় নিংড়ানো প্রীতি ভালোবাসায়

মানুষে মানুষে ভেদ ঘুচে যাবে

বিশ্ব সংসারে মানুষ আবার মানুষ বলে পরিচিতি পাবে৷

সেই দিন এক নোতুন পৃথিবী

মানুষের তরে গড়ে নেওয়া হবে৷