প্রভাতী

নিম পাতার আত্মকথা

লেখক
কৌশিক খাটুয়া

হতে পারি আমি স্বাদে বেজায় তিক্ত

তবু আমারে দেখিয়া হয়োনা তোমরা ক্ষিপ্ত,

জন্ম থেকেই জন-হিতার্থে লিপ্ত

সেই ভাবনায় কল্যান কাজে উদ্দীপ্ত৷

স্বাদ-পরিবারে মোরা পাঁচটি ভাই

মিষ্টি, নোনতা, ঝাল, অম্ল ও তিক্ত,

জনপ্রিয়তায় নাই মোর কোনো ঠাঁই

কিছু লোকে কয় অকথ্য অতিরিক্ত!

শিশুরা আমায় দেখেনা সুনজরে

তাদের কাছে চিরকাল আমি ব্রাত্য,

শৈশব থেকে যৌবনে পা দিলে

তারাই প্রচার করে আমার মাহাত্ম!

‘‘সূক্তো’’ দিয়ে দুপুরের প্রিয় আহার

‘‘নিম’’ যার এক অপরিহার্য উপাদান,

নিম-বেগুনের মনি-কাঞ্চন যোগ

গুনি জনে দেয় তার যোগ্য সম্মান৷

ঔষধি বৃক্ষ কেহ কেহ মোরে বলে

বাকল, পত্র, মূল, ফুল আর ফলে,

মানব সেবায় নিয়োজিত আজও আছি,

বহুযুগ ধরে তোমাদের কাছাকাছি৷

মানুষ আমারে চিনে নেয় ধীরে ধীরে

কিছু পরে হই তাদের কাছে স্বীকৃত,

চিকিৎসা বিদ্যায় বহু আগে মেলে ঠাঁই

আয়ুর্বেদ শাস্ত্রে অতীতেই পরিচিত৷

এখন আর আমি নয় শুধু বঙ্গে

বাড়ায়েছি হাত দেশ হতে দেশান্তরে,

জনপ্রিয়তায় আমিও এখন তুঙ্গে

সমাদৃত আমি তোমাদের ঘরে ঘরে৷

বইয়ের নামেই বিপত্তি

Baba's Name
শ্রী প্রভাতরঞ্জন সরকার

ঔষধ রোগকে হত্যা করে৷ তাই হত্যাকারী অর্থে ‘থুর্ব’ ধাতু ড করে যে ‘থ’ শব্দ পাই তার একটি যোগরূঢ়ার্থ হচ্ছে ঔষধ৷ এই ঔষধ যে কেবল শারীরিক রোগের ঔষধ তাই নয়, মানসিক রোগের ঔষধও৷ মানসিক রোগের যতরকম ঔষধ আছে তার একটা নাম হচ্ছে মানুষের মনে রসচেতনা জাগিয়ে তার মনকে হালকা করে দিয়ে ব্যথাভার সরিয়ে দেওয়া–চিন্তাক্লিষ্টতা  অপনয়ন করা৷ এজন্যে প্রাচীনকালে এক ধরনের মানুষ থাকতেন যাঁরা মানুষের মনকে নানান ভাবে হাসিতে খুশীতে ভরিয়ে রাখতেন৷ মন ভাবে–ভাবনায় আনন্দোচ্ছল হয়ে উপচে পড়ত৷ এই ধরনের মানুষেরা শিক্ষিত বা পণ্ডিত থেকে থাকুন বা না থাকুন এঁরা মানব মনস্তত্ত্বে অবশ্যই পণ্ডিত হতেন৷ এঁদেরই বলা হত বিদুষক৷ বিদুষকের ভাববাচক বিশেষ্য ত্ব্ব্দব্ধব্জ্ত্রন্তুব্ধ প্সব্ভুগ্গ ‘বৈদুষ্য’ শব্দটির সঙ্গে নিশ্চয়ই তোমরা ভালভাবেই পরিচিত৷

‘‘বাক্ বৈখরী শব্দঝরী শাস্ত্র  ব্যাখ্যান কৌশলম্৷

বৈদুষ্যং বিদুষাং তদ্বৎ ভুক্তয়ে ন তু মুক্তয়ে’’৷

বিদুষকের বিদ্যেৰুদ্ধি থাক্ বা না থাক্ তাঁদের মনস্তত্ত্বের জ্ঞান থাকা দরকার, উপস্থিত ৰুদ্ধি ত্মন্দ্ব্ত্রস্তুম্ভ ভ্রন্ব্ধগ্গ থাকা তো চাই–ই৷ তোমরা অনেকেই নিশ্চয় মুর্শিদাবাদের শরৎচন্দ্র পণ্ডিত মহাশয়ের নাম শুনেছ৷ তাঁর মত উচ্চমানের বিদুষক খুব কমই জন্মেছেন৷ সাধারণের মধ্যে ‘দাদাঠাকুর’ নামে পরিচিত এই মানুষটি ‘বিদুষক’ নামে একটি পত্রিকাও ছাপাতেন৷ সেবার ৰহরমপুরে বঙ্গ সাহিত্য সম্মেলন হচ্ছে৷ উপস্থিতদের মধ্যে শরৎচন্দ্রপণ্ডিত মহাশয় তো আছেনই, আর ছিলেন সুপ্রসিদ্ধ কথাশিল্পী শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়৷ তিনি তখন প্রতিষ্ঠার তুঙ্গে৷ তাঁর লেখা ‘চরিত্রহীন’ পুস্তকটির তখন ‘খোলা থেকে নোলা’ গরমাগরম আলুর চপের মতই ৰাজারে ৰেজায়** কাটতি৷

শরৎ চাটুজ্জে নামকরা কথাশিল্পী ছিলেন ঠিকই, কিন্তু ভাষণ ভাল দিতে পারতেন না.....মজলিসী গল্পগুজবে ছিলেন ওস্তাদ৷ সবাই তাঁকে ধরে বসল–‘‘আপনাকে এখানে কিছু বলতেই হবে৷’’ শরৎ চাটুজ্জে দু’এক মিনিট দায়সারা গোছের কিছু বলে বসে পড়লেন৷ আর বসার আগে বললেন–‘‘আমি আর এখানে ৰেশী কিছু বলব না–বলবেন বিদুষক শরৎচন্দ্র৷’’শরৎচন্দ্র পণ্ডিত (দাদাঠাকুর) উঠে খানিকক্ষণ বললেন আর বসার আগে বললেন–আমি আর কতটুকু জানি, আমার চেয়ে ঢ়ের ৰেশী জানেন ওই ‘চরিত্রহীন’ শরৎচন্দ্র৷

(* কুলোকর্ণী,কুলোর সংস্কৃত ‘শূর্প’৷ শূর্পঞ্ছশূপ্পঞ্ছশূপ৷ উত্তর ভারতীয় ভাষাগুলিতে কুলোকে ‘শূপ’ বলা হয়৷ যার নখ শূর্প অর্থাৎ কূলোর মত সে শূর্পণখা৷)

(** এটি একটি খাঁটি ৰাঙলা শব্দ৷ ফার্সী ৰজহ্’–এর সঙ্গে এর কোনো সম্পর্ক নেই৷ ফার্সী ‘ৰজায়’শব্দের সঙ্গেও এর কোনো সম্পর্ক নেই৷ শব্দটির অবস্থা কতকটা ৰাঙলা শব্দ ‘পিদীম’–এর মত৷ অনেকে ভাবেন এটি ৰোধ হয় সংস্কৃত ‘প্রদীপ’ থেকে এসেছে৷ না, তা নয়৷ এটি একটি খাঁটি ৰাঙলা শব্দ৷ স্থান বিশেষে ‘পিদ্দিম’ও ‘পিদ্দুম’ রূপেও উচ্চারিত হয়৷)

চড়ুই ছানার শাস্তি

লেখক
প্রণবকান্তি দাশগুপ্ত

দুপুর বেলা ঘুলঘুলিতে

চড়ুই পাখীর ঝগড়া---

কিচির মিচির খাবার ওদের

হয় না সমান বখরা৷

কেউ নেবে না কমতি কিছু,

চায় না কেউ ঠকতে,

তুতুন বাবুর ঘুম ভেঙেছে,

চললো সে তাই বকতে৷

ডান হাতে এক ছড়ি নিয়ে

যেমনি তুতুন উঠলো,

চড়ুইগুলো ফুড়ুৎ ফুড়ুৎ

এদিক ওদিক ছুটলো৷

একটি ছানা নরম ডানা

পারলো নাকো উড়তে

মারের চোটে চললো সে তাই

যমের বাড়ি ঘুরতে৷

হায় রে কপাল, এমনি যারা

নির্দোষ অসহায়

শাস্তি যত তারাই যে পায়

তারাই জীবন খোয়ায়৷

রুদ্রের আশীষ

লেখক
কৌশিক খাটুয়া

অন্তবিহীন পথের পুঁজি

    অন্তরেরই স্বান্তনা,

সে’ স্বান্তনা দূর করে দেয়

     অবাঞ্ছিত যন্ত্রনা৷

তোমার লীলার যুগল স্বরূপ

      আনন্দ আর যন্ত্রনা,

মঙ্গলময় আশীষ নিহিত

    নাইকো সেথায় বঞ্চনা৷

ব্যথা কেন আসে কেন চলে যায়

কাঁদিয়ে মাতিয়ে হাসিতে ভরায়,

কারণ-অকারণ নাই নিবারণ

      জাগ্রত করে চেতনা৷

লুকায়ে যে’জন অন্তরেতে

আলো হাতে পথ দেখাতে,

 অসহায় দিগ্‌ভ্রান্ত পায়

   একাত্মতার মন্ত্রণা৷

তোমার পথের পান্থ যে’জন

    লক্ষ্য পূরণে অগ্রগমন,

ঝঞ্ঝা-ঝটিকা সাময়িক বাধা

       হৃদয় ছিল উন্মনা৷

আলো করে আছো তুমি

আমার মনের মনোভূমি,

তোমার রাতুল চরণ চুমি

   নিত্য তোমার অর্চনা৷

ক্ষুদ্র এ’মন তোমারে চায়

ধরার মাঝে অধরার ভয়

আকর্ষণের অমোঘ নিয়মে

   প্রকাশে সুর-মুর্চ্ছনা!

আফিমের মৌতাত

Baba's Name
শ্রী প্রভাতরঞ্জন সরকার

‘ধস’ ধাতুর অর্থ হচ্ছে হত্যা করা, আঘাত করা, জখম করা, ঝরিয়ে দেওয়া৷ যে বস্তুটি আঘাত করে জখম করে তাকে ‘খস’ (খসূচ্) বলা হয়৷

 কেউ যদি অত্যধিক পরিমাণে মদ গেলে তাহলে তার যকৃৎ জখম হয়ে যায়৷ তেমনি কিছু কিছু এমন বস্তুও আছে যারা স্নায়ুকোষকে ঝিমিয়ে দেয় ও দীর্ঘকাল ধরে এই ঝিমুনির জের চলতে চলতে শেষে স্নায়ুকোষ নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ে৷ স্নায়ু (নার্ভ  সেল) আর কাজ করে না....বিহ্বল দৃষ্টিতে তখন ফ্যালফ্যাল করে চাইতে থাকে৷ চিন্তার প্রাখর্য তো থাকেই না, চিন্তার সামর্থ্যও শেষ হয়ে যায়৷ এই ধরণের ঘটনাটি ঘটে দীর্ঘ দিন ধরে অতিরিক্ত পরিমাণে সিদ্ধি, গাঁজা, চণ্ডু, চরস ও আফিং খেলে৷ মর্ফিন (মর্ফিয়া) ঘটিত বস্তুতে এই জঘন্য গুণ রয়েছে৷ স্নায়ুকোষ যাতে রোগগ্রস্ত না হয় সেইজন্যে গাঁজাখোর, আফিংখোররা বেশী মাত্রায় দুগ্ধ পান করে থাকে৷ তাতেও ঠ্যালা সামলানো দায় হয়৷ শেষ পর্যন্ত মানুষ জড় হয়ে যায়৷ মদ্যপানে মানুষ জড় হয় না–অতিরিক্ত উত্তেজনা জাগে৷

          মদ্য একটি অতি উত্তেজক বস্তু৷ উত্তেজক হলেও কফি কোকো–চা অল্পমাত্রায় উত্তেজক৷ তাই তারা বড় রকমের ক্ষতি করতে পারে না৷ তবে স্নায়ুর সাময়িক উত্তেজনা বেড়ে যাওয়ায় ওই বস্তুগুলি পান বা গ্রহণ করলে ক্ষুধামান্দ্য দেখা দেয়৷ আর আফিং, গাঁজা, চণ্ডু, চরস এরা ঘটায় উল্টোটা৷ উত্তেজনার বদলে আনে অবসন্নতা৷ এই অবসন্নতা শেষ পর্যন্ত মানুষকে জড়ত্বে পর্যবসিত করে৷ একটা ভুল ধারণা আছে যে আফিম খেলে বুঝি পেটের রোগ সারে৷ কথাটা ডাহা মিথ্যা৷ আফিংখোর নেশার ঘোরে ভাবে এতে বুুঝি তার পেটের রোগ সারছে৷ একবার একটা ঘটনা হয়েছিল৷ এক ট্রেনে এক সাধুবাবা যাচ্ছেন.... যাচ্ছেন হিমালয় থেকে কন্যাকুমারী৷ ট্রেনের অন্যান্য সহযাত্রীদের সঙ্গে বেশ ভাল ভাল কথা বলতে বলতে যাচ্ছেন৷ হঠাৎ সন্ধ্যের দিকে সাধুবাবা ছটফট করে উঠলেন৷ সবাই শুধোলেন, ‘‘ক্যা হুয়া, ক্যা হুয়া, সাধুবাবা৷

সাধুবাবা বললেন–‘‘মাথা ঘুরছে’’৷

সবাই শুধোলে–‘‘ক্যা হুয়া, ক্যা হুয়া, ক্যা হুয়া–হুক্কা হুয়া, হুক্কা হুয়া, হুক্কা হুয়া৷

সাধুবাবা জানালেন, তিনি সঙ্গে আফিমের ডিবেটি আনতে ভুলে গেছেন৷ এই সময় তিনি একটু আফিং সেবন করেন৷ সহযাত্রী ছিলেন জনৈক কলকাতার বাবু৷ তিনি বললেন ‘‘একটু অপেক্ষা করুন সাধুবাবা৷ হয়তো বা আমি একটু আফিং যোগাড় করতে পারব’ খন’’৷

বাবুটি পরের ইষ্টিশনে নেবে গেলেন৷ প্লাটফর্মের নীচের দিক থেকে একটু আফিং রঙের ভিজে মাটি তুলে এনে গুলি পাকিয়ে সাধুবাবাকে হাঁ করতে বললেন৷ বাবুটি সেই গুলি সাধুবাবার মুখে ছুঁড়ে ঢুকিয়ে দিলেন৷ খানিক বাদে সাধুবাবা স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে এলেন৷ তাঁর মাথা ঘোরাও বন্ধ হয়ে গেল৷ তিনি আবার গল্পগুজৰ জুড়ে দিলেন৷

কথা প্রসঙ্গে এও বললেন–দেখলেন তো আফিংয়ের গুণ৷ সামান্য একটু খেলুম৷ তাতেই মাথা ধরা সেরে গেল৷

সাধুবাবা খানিকক্ষণের জন্যে গাড়ীর বাথরুমে গেলে কলকাতার বাবুটি অন্যান্য সহযাত্রীদের বললেন–আমি প্ল্যাটফর্মের নীচের থেকে ভিজে মাটির গুলি পাকিয়ে সাধুবাবার মুখে ছুঁড়ে দিলুম৷ তাতেই তাঁর রোগ সেরে গেল৷  আফিংয়ে  রোগ সারে সেটা কেবল একটা মানসিক কল্পনা মাত্র৷ আফিং অবসাদ আনে৷ সেই অবসাদের আসা বা অবসন্নতায় যাওয়াটা নেশাগ্রস্ততা ছাড়া কিছুই নয়৷ আমি আরও লক্ষ্য করেছি, ওই যে গুলিটা আমি সাধুবাবার মুখে ছুঁড়ে ঢুকিয়ে দিলুম সেটা মুখের ভেতরও যায়নি৷ সাধুবাবার দাড়িতেই আটকে গেছে৷

অর্থাৎ আফিংয়ের  নেশার চেয়ে অবসন্ন হতে চাওয়াটাই নেশা৷ এককালে এই আফিং–গ্রস্ত হয়ে চীন ধবংস হতে বসেছিল....এককালে আফিমের নেশায় অসমও ধবংস হয়ে যেতে বসেছিল৷ তাই আফিংয়ের নেশা থেকে সাবধান৷

শুণেছি ভারতের কোন একটি তীর্থে–তীর্থটিকে পক্ষীতীর্থ বলা হয়–সেই তীর্থের পুরোহিত একটি নির্দিষ্ট সময়ে পাহাড়ের ওপর দেবতার প্রসাদ এক থালা রেখে দিয়ে আসেন৷ আর শকুনি জাতীয় কয়েকটি পক্ষী সেই নির্দিষ্ট সময়ে সেই প্রসাদ ভক্ষণ করতে আসে ৷ এই অপরূপ অলৌকিক দৃশ্য দেখবার জন্যে তীর্থে অনেক যাত্রী–সমাগম হয়ে থাকে৷ আমি মনে করি, আসল ব্যাপারটি হচ্ছে ওই তথাকথিত প্রসাদের সঙ্গে কিছুটা  আফিং মেশানো হয়৷ ওই আফিংমের নেশায় গ্রস্ত হয়ে পাখীরা নির্দিষ্ট সময়ে এসে ওই আফিং–মেশানো প্রসাদ খেয়ে অবসন্নতাকেই ডেকে আনতে চায়৷

একবার শোণা গেছেল যে কোন একটি হোটেলে বা রেস্তরাঁয় চা খাবার জন্যে কলেজের ছেলেদের ভীড় লেগে যেত৷ খোঁজ নিয়ে হয়তো দেখা যেত যে সেখানেও হয়তো এই পক্ষীতীর্থের মত ঘটনাই অলক্ষ্যে ঘটে চলেছে৷

আফিংয়ের  বিষ সাপের ফেনার মতই হানিকারক৷ সাপের বিষ থেকে এ্যালোপ্যাথি, হোমিওপ্যাথি ও আয়ুর্বেদের ঔষধ তৈরী হয় ঠিকই, তেমনি আফিং থেকে মর্ফিন/মর্ফিয়া ইন্জেকশনও তৈরি হয়৷ তবে ঔষধ তৈরি হয় বলেই স্বাভাবিকভাবে নেশার ঝোঁকে যাবার আশায় মর্ফিয়া ইনজেক্শান নেবে এটা তো সমর্থন করা যায় না৷ ‘অহিফেন’ শব্দের অর্থ সাপের ফেন৷ মনে রেখো, ফেন বা ফেনা বানানে ‘ন’ ও ‘ণ’ দুই–ই চলবে৷ অহিফেন থেকে  ‘অহিফাম’–শব্দ এসেছে আর ‘অহিফাম’ থেকে এসেছে ইংরাজী ‘ওপিয়াম’ (ত্থহ্মন্ব্ভপ্প) শব্দটি৷    (শব্দচয়নিকা–১৪শ খণ্ড)

সুকুমার  রায়ের কবিতা

ত্রিকালদর্শী

ওগো ত্রিকালদর্শী মধুবন বিহারী

বিশ্বভূবন রেখেছ তুমি মননে ধরি

অনন্তলীলায় খেলিছ বিশ্ববিধাতা

দয়ার সাগর তুমি জীবের পরিত্রাতা

বাজাও বাঁশী ওগো মোহন বেশে

নন্দনলোকের দিব্যানন্দে আছ মিশে৷

 

অজানা দেশে

দিনের আলোয় ব্যস্ত তারা

তাইত বুঝি দেয় না ধরা

রাত গগনে তাকায় তারা

কৌতূহলে দীপ্ত নয়ন ভরা

আসতে  মানা মোদের পাশে

বন্দী সে কোন অজানা দেশে৷

সুভাষচন্দ্রের স্মরণে

লেখক
প্রভাত খাঁ

স্মরণীয় বরণীয় যারা এ বিশ্ব সংসারে

তুমি তাদেরই একজন হয়ে চিরকাল রবে৷

পুণ্যভূমি এ ভারতে সর্বশ্রেষ্ঠ তুমি,

মহান সন্তান তাই ধন্য জন্মভূমি৷

তোমার পবিত্র প্রতিকৃতি প্রতি ঘরে ঘরে

সযত্নে পূজা পায় অন্তরে অন্তরে৷

হে দেশসেবক তুমি যে মানস পুত্র

স্বামীজির, তাই তো মহান পবিত্র!

আজীবন হে মহান সাধক আত্মমুক্তি তরে

নয়, মাতৃভূমির মুক্তি হেতু সংগ্রাম করিয়া গেছ

রেখে যাও অবিস্মরণীয় দেশপ্রেম, আত্মত্যাগ,

আপোষহীন চির সংগ্রামী ধন্য তুমি

মাননিকো দেশ ভাগ৷

স্মরণ করি সেই বিশ্বপিতার মহান ইচ্ছায়

দ্বিখণ্ড জন্মভূমি পুনরায় এক হ’ল স্বেচ্ছায়৷

হয়তো বা একদিন আজকের খণ্ডিত ভারতবর্ষ

ভবিষ্যতে হে মহান নেতাজী

তোমার ঐশী শক্তির ইচ্ছায়

মিলে যাবে এক হ’য়ে৷

 

দেশনায়কের প্রতি শ্রদ্ধার্ঘ

লেখক
কৌশিক খাটুয়া

ভারত মাতার বীর সন্তানের হাত ধরে

ভারতের স্বাধীনতা অর্জন,

যে স্বাধীনতার তরে শতবর্ষ ধরে

শত শহীদের প্রাণ বিসর্জন৷

স্বাধীন দেশ, খন্ডিত দেশ,

সহস্র সমস্যায় জর্জরিত,

ধনী-গরীব, শিক্ষিত-মূর্খ,

 নানান ধর্মে বিভাজিত৷

ভারতের সনাতন ধর্মের বিকৃতি

অনুভবি তার ভয়ঙ্কর পরিণতি৷

 

কোন ভক্তির ছলে--------

ফুলের মালায় ধূপের ধোঁয়ায়

ঢাকা পড়ে যায়,

প্রাতিষ্ঠানিক আবহাওয়ায়, 

ব্যবসায়িক প্রতিযোগীতায়

তিলে তিলে নিঃশেষ হয়ে যায়,

আমাদের মনে কি সযতনে লালিত

তাঁর ত্যাগ, তিতিক্ষা, আদর্শ?

স্বাধীনতার পঁচাত্তর বছর পরেও

কী মূল্য দিয়েছে ভারতবর্ষ?

 

রক্ত ক্ষরণ আজও আছে অম্লান,

যদিও রক্ত লাগেনা দেশের কাজে,

অকালে তরুণ যুবকের যায় প্রাণ

রক্ত ক্ষরণে নেতারাই শুধু বাঁচে!

সরকারি টাকায় ঢাকা পড়ে অপরাধ

মৌন হয়েছে ন্যায় বিচারের দাবি,

অকাল মরনে নাই কারো পরিতাপ

নীরব সাক্ষী পূব আকাশের রবি!

জেগে আছে শুধু গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব দলবাজি,

নেপথ্যে আছে দাদা দিদিদের

সুনিপুণ কারসাজি!

 

নেতা-নেত্রীর কন্ঠে তোমার

কপট সম্মান,

তাদের শুকনো হৃদয়ে রয়েছে

কি তব স্থান!

বক্তব্য শেষে করতালিতে তারা

আত্মতৃপ্তি খোঁজে,

পরের দিন সকলই ভুলিয়া,

নিজের স্বার্থ বোঝে?

 

উপেক্ষিত সুভাষ চিন্তা,আদর্শ,

অনুভবি তার চরম পরিণাম,

এখনো কি হয়নি চেতনা----

দেশ মোর অপরিণামদর্শীতার

দেয়নি কি দাম?

 

তাই মোর একান্ত অনুরোধ----

তাঁর আদর্শ রূপায়ণে

জাগিয়ে তোলো আপন মূল্যবোধ৷

তা’’ হবে দেশ নায়কের প্রতি

প্রকৃত শ্রদ্ধা নিবেদন,

আজ শুভদিনে স্মরণে বরণে

প্রণামে করি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন৷

 

উদীচী

Baba's Name
শ্রী প্রভাতরঞ্জন সরকার

এক ভদ্রলোক থাকতেন কলকাতায়৷ তাঁর নাম–ধরো, মনোরঞ্জন ঘোষ–দস্তিদার৷ বাড়ী তাঁর বাখরগঞ্জ জেলার গাভা গ্রামে৷ এক বার তিনি গ্রামে যাবেন৷ গ্রামে যে লোকটি তাঁর অনুপস্থিতিতে তাঁর পরিবারকে দেখাশোনা করে, ধরো তার নাম গোপাল দাস৷ মনোরঞ্জনবাবু গোপালকে চিঠি লিখে জানালেন, অমুখ তারিখে গ্রামে যাচ্ছি৷ তুমি ষ্টীমার ঘাটে উপস্থিত থেকো৷

মনোরঞ্জনবাবুর অনুপস্থিতিতে ও অজ্ঞাতে তাঁর পরিবারে এমন অনেক ঘটনাই ঘটে গেছে যা এখনো পর্যন্ত তাঁর জানবার ও শোণবার সুযোগ হয়নি৷ ষ্টীমার থেকে নেবে মনোরঞ্জনবাবু গোপালকে জিজ্ঞেস করলেন–হ্যাঁ গোপাল, বাড়ীর সব খবর ভাল তো

গোপাল বললে–হ্যাঁ কত্তা, সবাই ভাল, সব কিছুই ঠিকঠিক চলছে৷

তারপরে একটু ঢ়োক গিলে একটু উদীচী করে বললে–কেবল সেই এ্যাল্সেশিয়ান* কুকুরটি মারা গেছে৷

 

এ্যাল্সেশিয়ান কুকুর মারা গেছে শুণে মনোরঞ্জনবাবু মুষড়ে পড়লেন৷ তারপরে টাল সামলে নিয়ে গোপালকে শুধোলেন–হ্যাঁ গোপাল, তা কুকুরটার হয়েছিল কী

গোপাল বললে–কী আর হবে কত্তা! বাঘের লেখা ও সাপের দেখা, জন্ম–মৃত্যু–বিয়ে তিন বিধাতার নিয়ে–এই ব্যাপারে মানুষ আমরা কী করতে পারি! ওই পোড়া মাংস খেয়েই কুকুরটা মরল৷

মনোরঞ্জনবাবু বললেন এ্যাঁ পোড়া মাংস! কীসের পোড়া মাংস

গোপাল উদীচীর পথ ধরে চলেছে৷ সে বললে–ওই যেদিন আপনার বাড়ীটা পুড়ে গেল না সেদিন আস্তাবলের ভেতরে থাকা ঘোড়াটাও যে পুড়ে মরে গেল৷ ওই পোড়া ঘোড়ার মাংস খেয়েই এ্যাল্সেশিয়ানটা মরল৷

মনোরঞ্জনবাবু বললেন–এ্যাঁ! আমার অমন প্রাণচঞ্চল আরবী ঘোড়াটা আর নেই৷ তুই বলিস কী রে!

গোপাল বললে–ওই যেদিন বুড়ী মা কলেরায় মারা গেলেন তার ঠিক দু’দিন পরে৷

মনোরঞ্জনবাবু বললেন–এ্যাঁ! মা–ও নেই৷ বলিস কী গোপাল! উদীচী করতে করতে গোপাল বললে–হ্যাঁ কত্তা, বুড়ী মা–ও গত হয়েছেন৷

মনোরঞ্জনবাবু বললেন–কবে কলেরা হয়েছিল আমি যে কিছুই জানি না৷

গোপাল বললে–তারিখটা ঠিক মনে নেই কত্তা৷ তবে খোকাবাবু যেদিন মারা গেল তার হপ্তা খানেকের মধ্যে৷

মনোরঞ্জনবাবু বললেন–এ্যাঁ খোকাটাও নেই! তবে তুই যে বললি সব কিছুই এক রকম চলছে৷

গোপাল বললে কত্তা, উদীচী করছিলুম, ধাপে ধাপে বলছিলুম৷

মনোরঞ্জনবাবু কাঁদতে কাঁদতে বললেন–খোকার কী হয়েছিল রে

গোপাল বললে মা–মরা বাচ্চা ছেলে কি বাঁচে! গিন্নী–মা মারা যাবার পর থেকেই তার ঠিক মত দেখাশোনা হচ্ছিল না৷ তাই খোকাকে আর বাঁচানো গেল না৷

স্ত্রীও মারা গেছেন শুনে মনোরঞ্জনবাবু বললেন–এ্যাঁ বলিস কী! সেও নেই৷ তবে আর কাদের জন্যে গ্রামে যাব! চল্, ষ্টীমার ঘাটেই ফিরে যাই৷

আজব কথা

লেখক
প্রণবকান্তি দাশগুপ্ত

রায় বাবুদের ছাগলছানা

                   রোজ সকালে নাচতো,

ঘাস খেতোনা, বিকেল বেলা

                        দইয়ের হাঁড়ি চাঁচতো৷

তাই না দেখে গাধার নাতি

                        ফিকফিকিয়ে হাসতো,

ঘোড়ার মেয়ে ভেংচি কেটে

                        খকখকিয়ে কাশতো