প্রভাতী

পাখী জানে

লেখক
প্রণবকান্তি দাশগুপ্ত

 

পাখী জানে ঘুম ভাঙানো গান,

খুশির স্রোতে ভাসিয়ে দিতে প্রাণ!

 

পাখী জানে নিরুদ্দেশের পানে

মেলতে ডানা অজানারই টানে৷

 

পাখী জানে হারিয়ে যেতে বনে,

নীড় বাঁধতে একান্তে নির্জনে৷

 

পাখী জানে মান-ভাঙানো শিষ

দোদুল ডালে দুলতে অহর্নিশ৷

 

পাখী জানে যেথায় খুশি যেতে

বাঁধন-হারা মুক্তির স্বাদ পেতে৷

 

পাখীর জানে সুদূর মেঘের আড়ে

উড়তে উড়তে হয়তো পাবে তাঁরে৷

‘তুমি নিজে এলে’

লেখক
কৌশিক খাটুয়া

তুমি নিজে এলে আমার ঘরে

সেকি আমার তরে শুধু আমার তরে!

নাই আবাহন নাই আমন্ত্রণ

তবুও তোমার শুভ পদার্পণ,

সূর্যোদয়ের রাঙা ঊষায়

মনোবীণায় সুর ভেসে যায়!

 

দিবস রজনী আলোকে আঁধারে

আশা-হতাশায় ‘এ’ জীবন ভরে,

কত কাল যুগ কতনা জীবন

অজান্তে কভুকি করেছি স্মরণ!

তাতো জানা নাই মনে নাই ঠাঁই

তবু ভোরের আঙ্গিনায়

তোমা দেখা পাই৷

 

কেন আমায় করলে স্মরণ,

তুমি জানো এর গোপন কারণ৷

আলো হাতে দিলে পথের দিশা,

কাটিল গহন অমানিশা৷

বুঝিনি তো আগে স্নেহ-অনুরাগে

গড়েছ প্রীতির বন্ধন,

ভাব-জড়তা দূর করে দিলে

পেয়েছি প্রেমের স্পন্দন৷

 

মানব জীবনে শঙ্কা হরণে

যোগাও দুর্জয় সাহস,

হতাশার যবনিকা টেনে 

প্রাণচঞ্চলতা নিরলস৷

অন্তঃবিহীন পথের পুঁজি

 অনন্ত আলোর প্রেরণা৷

তাই স্বাগত জানাই প্রাণ মন ভরে

কাটিল বিড়ম্বনা৷

গদ্দী মেঁ কৌন্ হ্যায়

Baba's Name
শ্রী প্রভাতরঞ্জন সরকার

মানুষ আরামের অন্বেষণ করে৷ তাই এই অর্থে ‘ঢুণ্ঢ’ড করে যে ‘ঢ’ শব্দ পাই  তার একটা অর্থ হ’ল আরামের উপকরণ (ভাবারূঢ়ার্থ), যোগারূঢ়ার্থে ‘গদি’৷ গদি বলতে ৰোঝায় যা শয়নকে বা উপবেশনকে আরামদায়ক করে দেয়৷ খাটের তোষকের নীচে যে গদি ব্যবহার করি ৰা চেয়ারের ওপর যে গদি ব্যবহার করি তার জন্যে ‘ঢ’ ব্যবহার করা যেতে পারে৷

উত্তর ভারতে সাধারণতঃ ‘গদ্দা’ ব্যবহূত হয়৷ তবে ‘গদ্দী’ শব্দে ব্যবহার যে নেই এমন নয়৷ তবে উত্তর ও পশ্চিম ভারতে ‘গদ্দী’ বলতে ৰোঝায় দোকানদার যেখানে বসে তার কাগজপত্র দেখে বা হিসেব–নিকেশ করে সেই  স্থানটি অর্থাৎ অফিস৷ ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের অফিসকেও গদ্দী বলা হয়৷ গদ্দীর কথায় শেঠজীর সেই গপ্পটাও মনে পড়ে গেল৷

শেঠজীর বাড়াবাড়ি অসুখ........মৃত্যুশয্যায়৷ বাড়ীতে কান্নার রোল উঠেছে৷ খবর পেয়ে শেঠজীর পাওনাদারেরা উদ্বিগ্ণ৷  শেঠজীর অধমর্ণদের মুখে আনন্দের পাতলা ঝিলিক, যেন জল মেশানো ভেজাল দুধের পাতলা সরটি৷ শেঠজীর পুত্রেরা শশব্যস্ত হয়ে বিক্রয়কর, আয়কর ও আৰগারী বিভাগের খাতাপত্র সামলাতে ব্যস্ত৷

শেঠজী মরণাসন্ন৷ সেদিনকার মত গদ্দী ৰন্ধ করে তাঁর সাত ছেলে করজোড়ে শয্যাপার্শ্বে  এসে দাঁড়াল৷ শেঠজী নাম করে করে তাদের খবর নিতে লাগলেন৷ প্রথমে খোঁজ করলেন প্রথম পু–ের৷ শেঠজী বললেন– রামনজ র  হাজির রামনজ র হাত জোড় করে বললে–জী পিতাজী, হাজির৷ এবার দ্বিতীয় পু–ের খোঁজ করে বললেন–রামপরীক্ষণ হাজির৷ রামপরীক্ষণ বললে–জী পিতাজী, ম্যাঁয় উপস্থিত হুঁ৷ এবার তৃতীয় পু–ের খোঁজ নিয়ে শেঠজী বললেন–রামসুরথ হাজির রামসুরথ বললে–জী পিতাজী, ম্যাঁয় আপকা চরণ–কমলোঁ মেঁ হুঁ৷ এবার চতুর্থ পু–ের খোঁজ নিয়ে শেঠজী বললেন–রামসিংহাসন হাজির রামসিংহাসন বললে–জী পিতাজী, আপকা দাস হাজির৷ এবার পঞ্চম পু–ের খোঁজ নিয়ে বললেন–রামইক্ৰাল হাজির রাম ইক্ৰাল বললে–জী পিতাজী, ম্যাঁ আপকা চরণোঁ মেঁ হুঁ৷ এবার ষষ্ঠ পু–ের খোঁজ নিয়ে বললেন–রামবেশন  হাজির রামবেশন বললে–জী পিতাজী, দাস উপস্থিত হ্যায়৷ এবার সপ্তম পু–ের খোঁজ করে শেঠজী বললেন–রামনুঠা হাজির রামনুঠা বললে–দাস আপকে সেবা মেঁ হাজির হ্যায়৷ এবার শেঠজী ক্রোধে অগ্ণিশর্মা হয়ে বললেন–তুমলোগ  সাতোঁ ভাই  ইহাঁ পর হাজির হো তো গদ্দী মেঁ কৌন হ্যায় শেঠজী রাগে গর্জন করতে থাকায় হূদপিণ্ডের  ক্রিয়া ৰন্ধ হয়ে গিয়ে শেঠজীর মৃত্যু হ’ল৷

হ্যাঁ, তাহলে ৰুঝলে বাংলা ‘গদি’ ও উত্তর ভারতের ‘গদ্দী’ এক জিনিস নয়৷ একটার সঙ্গে অপরটা তোমরা গুলিয়ে ফেলো না৷

গাজনের গপ্পো

লেখক
প্রণবকান্তি দাশগুপ্ত

শিব নাকি শ্রাবণ মাসে জন্মেছিলেন৷ আর বিয়ে করেছিলেন চৈত্রমাসের শেষে৷ তাই তো চৈত্রমাসের শেষে হিন্দুনারীরা উপোস করে৷ তারা বলেন নীলের উপোস৷ আর তার সঙ্গে শুরু হয় গাজন উৎসব৷ শিবের বিয়ে উপলক্ষ্যে সন্ন্যাসীরা ছিলেন বরযাত্রী৷ বরযাত্রীরা মাঝে মাঝে গর্জন করতেন৷ সেই গর্জন থেকে গাজন শব্দের উৎপত্তি৷

আবার কেউ কেউ বলেন অন্যকথা৷ গাজনের শেষদিনে হয় চড়ক৷ মাটিতে চড়কের গাছ পুঁতে তার মাথায় আড়ভাবে একটা বাঁশ এমনভাবে বাঁধা হয় যাতে পাক খাওয়া যায়৷ আগে সন্ন্যাসীরা পিঠে লোহার বড় বঁড়শি বিধিয়ে বাঁশের শেষ অংশ থেকে ঝুলে পাক খেতো৷ এই নৃশংস প্রথাটিকে ইংরেজ সরকার ১৮৬৫ সালের ১৫ই মার্চ আইন করে বন্ধ করে দেন৷ তখন থেকে সন্ন্যাসিনীরা বুকে গামছা বা কাপড় বেঁধে চড়ক গাছে ঘুরপাক খেতে আরম্ভ করেন৷ চড়কের গাছটি হওয়া চাই শক্ত৷ নচেৎ ভেঙে পড়তে পারে৷ তাই শাল বা গজারি বা গর্জন গাছের একটি খুঁটি বছর খানেক পুকুরের জলে ডুবিয়ে রাখা হয়৷ গাজনের আগের দিন ভক্তরা সেই খুঁটি জল থেকে তুলে বেশ করে তেল মাখিয়ে মাটিতে পোঁতে৷ একে বলে গাছ জাগানো৷ এই গর্জন গাছের  সাহায্যে অনুষ্ঠান হয় বলেই হয়তো উৎসবের নাম গাজন৷

আবার বর্তমানকালের পণ্ডিতগণ বলেন, সার্বজনীন ভাবনা থেকে গাজন শব্দের উৎপত্তি৷ গ্রামের সকলে মিলে এই উৎসবে অংশগ্রহণ করতো বলে এই উৎসবের নাম গাজন৷ গ্রা+জন= গ+জন= ‘গাজন’৷

তবে এ প্রসঙ্গে শ্রীশ্রীআনন্দমূর্ত্তি তাঁর নমঃ শিবায় শান্তায় গ্রন্থে বলেছেন---‘‘সারা বছর ধরে নানান জনের সঙ্গে নানান কথাই তো বলছি---জাগতিক কাজ করছি, ধান চালের কথা বলছি, পটোলের দর, বেগুনের দর নিয়ে চর্চা করছি৷ অন্ততঃ একদিন প্রাণভরে চিৎকার করে শিবের নামে গর্জন করি, ‘শিবহে’ বলে মানুষকে আহ্বান করি৷ গর্জন প্রাকৃতে গজ্জন/ বর্তমান বাংলায় গাজন৷

নববর্ষের আশিস

লেখক
আচার্য প্রবুদ্ধানন্দ অবধূত

নববর্ষের শুভ প্রভাতে

প্রীতিভরা অভিনন্দন

জানাই সকলকেই  এ জগতে,

আনন্দে কাটুক সবার মন৷                           

 

হৃদয়ে আজ হোক

চেতনার উন্মেষ,

দূর হোক জড়ীভূত

দ্বন্দ্ব ও বিদ্বেষ৷

 

আমরা রয়েছি মিলে

এক প্রাণ এক মন,

সবাই সবার পাশে

 সবাকার আপনজন৷

 

কেহ নয় পর, দু দিনের খেলা, 

এই ভুবনের লীলা,

নিঃস্ব হাতে আবির্ভূত

নিঃস্ব হাতেই ফিরিবার পালা..

 

মিছে হানাহানি কেনই বা এত,                                          

দুঃখ কিসের তরে?

বিধাতার দান সবার জন্য

ক্ষণিকের এ সংসারে৷

 

আকাশ বাতাস সূর্য চন্দ্র

ঢেলে দেয় সবে আলো,

উদ্ভিদ,পশু,পাখি

মোদের আত্মীয়,

বাস সবারেই ভাল৷

 

এই ব্রত নিয়ে এগিয়ে চলতে,

নাহি বাধা কোন আর,

 গড়িব নোতুন বিশ্ব আমরা

পরমপুরুষের এ সংসার৷

 

নববর্ষের পূণ্য লগ্ণে

এই আমাদের শপথ,

মঙ্গলময় কর্মে রত

ছুটিবে বিজয় রথ৷

শোল–ঘাপটি

Baba's Name
শ্রী প্রভাতরঞ্জন সরকার

গাত্রূসম্কুচূঘঞূণিনি‘গাত্রসংকোচিন্’৷ ভাবারূঢ়ার্থে গাত্রসংকোচিন্ মানে যে শরীরকে সংকুচিত করে, যোগারূঢ়ার্থে যে পরিবেশগত ও মানসিক কারণে শরীরকে ছোট করে দেয়, ঘাপ্পি বা ঘাপটি মেরে বসে পড়ে৷ এই ঘাপ্পি বা ঘাপটি মারা আবার তিন ধরনের হয়৷

১) শোয়া–ঘাপটি ঃ যেমন হাত–পা কুঁঁকড়ে হাঁটু দু’টো ৰুকের কাছাকাছি এনে চিৎ হয়ে ৰা পাশ ফিরে শুয়ে থাকা৷ এতে শীত একটু কম লাগে৷ শীতের দিনে বিড়াল, কুকুর ও অন্যান্য অনেক জীৰকে এই ভাবে শোয়া অবস্থায় দেখতে পাৰে৷

 তোমরা কখনো কখনো ঠান্ডায় অনেকক্ষণ থাকার পর শীতের রাতে যখন নেপের তলায় চলে যাও যদিও সে সময়টায় আমি তোমাদের নেপ সরিয়ে দেখিনি তবু অনুমান করি খানিকটা সময় শরীরকে কিছুটা তাতিয়ে না নেওয়া পর্যন্ত তোমরা ৰোধ হয় ঘাপটি মেরে শুয়ে থাক অর্থাৎ কুঁকড়ি হয়ে শুয়ে থাকো৷

২) বসা–ঘাপটি ঃ দ্বিতীয় ঘাপটি হল বসা–ঘাপটি বা তিন–মুণ্ডে ৰসা৷ দু’টো হাঁটু হল দু’মুণ্ড ও তোমার নাকের ডগা হল তিন মুণ্ড৷ দু’হাতে করে অনেক সময় পা দু’টোও জড়িয়ে ধরো৷ তোমরা অনেক ক্ষেত্রে দুঃখের সময়ে, শোকের সময়ে এইভাবে ৰসে থাকো৷ আবার অনেক সময় হাঁটাহাঁটি ভাল লাগছে না ৰলেও ওই ভাবে বসে থাকো৷ হুগলী জেলার কলাচাষীদের আমি সাধারণতঃ ওইভাবে উৰু হয়ে বসে কলার কাঁদির ছড়া গুণতে দেখেছি৷ তোমরা দেখোনি

৩) দাঁড়িয়েও ঘাপটি মেরে থাকা যায়৷ এক হাতের কনুইয়ের ওপর বা কনুইয়ের ফাঁকে আরেক হাতের কনুই ঢুকিয়ে দিয়ে শীতের রাতের কষ্ট দূর করার চেষ্টা তোমরা করো না কি! নিশ্চয় করো৷ এতে শীতের কষ্ট কিছুটা কমানো যায়৷

একটা মজার কথা ভেবে দেখ৷ পরচর্চা করবার সময় (কারো কারো মতে যা ডালমুট–চানাচুরের চেয়েও মুখরোচক) কেউ কিন্তু ঘাপটি মেরে ৰসে না, ভাল করে আসন পেতেই বসে৷ মেয়েরা যাঁতীতে সুপুরি কোচাবার সময় পা ছড়িয়ে দিয়ে বসেন.... ঘাপটি মেরে বসেন না, কতকটা যেমন বসেন পা দিয়ে সলতে তৈরী করার সময়৷ যাই হোক্, এই ঘাপটি মারা হল এক ধরনের গাত্র সংকোচন৷

অনেকদিন আগে তোমাদের একবার শোল–ঘাপটির গপ্প ৰলেছিলুম না! একজন ছিলেন জাঁদরেল হাকিম সাহেৰ তাঁদের ছিল পারিবারিক একটি হেয়ার–কাটিং সেলুন৷ আরেকজন ছিলেন জাঁদরেল মৎস্যজীবী তাঁর ছিল সাতখানা মাছ ধরার ডিঙ্গি৷ কেউ কারো চেয়ে কম নয়–ইজ্জতে, আভিজাত্যে, অর্থকৌলীন্যে৷

গোপেন্দ্রনাথ হাকিমের এজলাসে একটা খুনের মামলায় সাক্ষ্য দিতে এসেছেন সেই মৎস্যজীবী বৃন্দাবনচন্দ্র৷ গোপেন্দ্রনাথ হাকিম বৃন্দাবনচন্দ্রকে শুধোলেন–আচ্ছা, যখন লোকটাকে খুন করা হচ্ছিল লোকটা কোনো আবাজ করেনি

বৃন্দাবনচন্দ্র ৰললে–হ্যাঁ, লোকটা তখন কই–কাতরান কাতরাচ্ছিল৷

হাকিম শুধোলেন––ওই বীভৎস কাণ্ড দেখবার সময় তুই কী করছিলি

বৃন্দাবনচন্দ্র ৰললে–আমি তখন ভয়ে শোল–ঘাপটি মেরে ৰসেছিলুম৷

গোপেন্দ্রনাথ হাকিম বৃন্দাৰনচন্দ্রকে শুধোলেন–সময়টা তখন দিন না রাত্তির, আলো না অন্ধকার

বৃন্দাবনচন্দ্র ৰললে–দিনও নয়, রাতও নয়, আলোও নয়, অন্ধকারো নয়, কেমন একটা আলো–আঁধারি৷ এই পুকুর পাড় ঘেঁসে মাছেরা যে সময় গাঁদি মারে তেমন সময়৷

গোপেন্দ্রনাথ হাকিম শুধোলেন–তুই তারপর কী করলি

বৃন্দাবনচন্দ্র ৰললে–আমি জাল–কাটা বোয়ালের মত ঝপাঙ করে জলে লাফ দিয়ে পড়লুম, তারপর চ্যাঙ মাছের মত চোঁ চোঁ করে পুকুরের ওপারে পঁৌছে গেলুম...কাতলা মাছের মত কেৎরে গিয়ে একটা আঁৰ গাছের আড়ালে গিয়ে নুকোলুম৷

গোপেন্দ্রনাথ ৰললেন–তোর ভীমরতি হয়েছে, সবেতেই মাছের কথা, সবেতেই মাছ নিয়ে আদিখ্যেতা৷ যেন মাছ ছাড়া দুনিয়ায় আর কোনো কুলীন ৰামুণ নেই৷

কথাটা বৃন্দাবনচন্দ্রের গায়ে লাগল....লাগল না ৰলে ৰলতে হয় ৰিঁধল৷

গোপেন্দ্রনাথ বৃন্দাবনচন্দ্রকে শুধোলেন–আচ্ছা, ৰল তো এই যে খুনের ঘটনাটা ঘটল .... রক্তপাত হল এতে আন্দাজ কতখানি রক্ত বেরিয়েছিল ৰলতে পারিস

বৃন্দাবনচন্দ্রের মুখেচোখে, ঠোঁটের কোণে অল্প হাসির ঝিলিক নেৰে এল৷ সে ৰললে– তা ঠিক কী করে ৰলি ৰলুন হুজুর, তৰে আপনি যাতে আন্দাজ পেতে পারেন সেই ভাবে ৰলছি...অ এই নাপতে বাটির এক বাটি হৰে৷

যাই হোক্, এই ঘাপ্পি মারা বা ঘাপটি মারা কাকে ৰলে জেনে গেলে৷

হ্যাঁ, তবে মটকা মারা কিন্তু আলাদা জিনিস আর এই মটকা মারার সঙ্গে গরদ–মটকা–তসরে কোনো সম্পর্ক নেই৷ ৰাঙলা ভাষায় ‘মটকা’ শব্দটি তিনটি অর্থে ব্যবহূত হয়৷ প্রথমতঃ যে পলু পোকার গুটি খেয়ে প্রজাপতি গুটি কেটে বেরিয়ে যায় সেই গুটির গরদ মোটা ও নিকৃষ্ট মানের হয়৷ সেই মোটা ও নিকৃষ্ট মানের গরদকে মটকা ৰলা হয়৷

পাকা ঘর বাদে খড়, টিন, টালি প্রভৃতি দিয়ে ঘর তৈরী করলে ঘরের যেটা সর্বোচ্চ অংশ তাকেও মটকা ৰলে–‘‘চেয়ে দেখ মটকার ওপর একটা মুরগী ৰসে রয়েছে’’৷

‘মটকা’র তৃতীয় অর্থ হল ভাণ বা অছিলা৷ ‘‘চেয়ে দেখ, মনে হচ্ছে ও ঘুমুচ্ছে, আসলে কিন্তু ঘুমুয়নি, মটকা মেরে পড়ে আছে৷ যে ঘুমায় তাকে ডেকে বা ধাক্কা দিয়ে তোলা যায় কিন্তু যে মটকা মেরে পড়ে থাকে তার ঘুম ভাঙ্গানো যায় না’’৷

হ্যাঁ, যদি কেউ কোনো জায়গায় ঢুকে নিজের পরিচয় গোপন রেখে বা নিজ উদ্দেশ্য চেপে রেখে চুপ করে একটা জায়গায় গিয়ে ৰসে থাকে তাকেও বলে ঘাপটি মারা–ভাল ৰাংলায় ‘গাত্রসংকোচী’, কথ্য ৰাঙলায় ‘ভিজে ৰেড়ালটি’৷

আয় চৈতালী ঝড়

লেখক
প্রণবকান্তি দাশগুপ্ত

আয় বসন্ত, আয় দুরন্ত, আয় চৈতালী ঝড়

আয়রে ভীষণ, আয়রে ভয়াল, আয়রে ভয়ংকর!

আনরে কাঁপন জীর্ণ শাখায়,

আনরে মরণ শুষ্ক পাতায়,

আনরে মাতন সবুজ পাতায়--- হানরে অসুন্দর!

আয় বসন্ত, আয় দুরন্ত, আয় চৈতালী ঝড়!

আয় ভাঙনের জয়গান গেয়ে, আয় মহা তাণ্ডবে,

এক ঘেয়েমির সুর-তাল কেটে আয় হত গৌরবে৷

আয় ধবংসের ডঙ্কা বাজিয়ে,

আয় সৃষ্টির অর্ঘ্য সাজিয়ে,

নবীন আশার পুলক জাগিয়ে আয় নতুনের চর!

আয় বসন্ত, আয় দুরন্ত, আয় চৈতালী ঝড়!!

ভুমাদর্শ

লেখক
আচার্য গুরুদত্তানন্দ অবধূত

একই পিতার পুত্র কন্যা

মানব মোদের এই পরিচয়

অন্য কিছু নাই৷

একই আকাশ একই বাতাস

যোগায় সবে বল

অভিন্ন এক হৃদিধারায়

আমরা উচ্ছ্বল৷

একই রণন---মাতিয়ে প্রাণে

টানছে একই পানে

সঞ্জীবীত আমরা সবাই

একের অভিধ্যানে৷

জীবন মরণ তুচ্ছ করি

গড়ি মোরা সমাজ

অসীম অপার ভালবাসায়

চাহি একের রাজ৷

বসন্ত-প্রকৃতি

লেখক
কৌশিক খাটুয়া

কাঁপন ধরা মাঘের শেষে

 বসন্তের আগমন,

চেয়ে নীহারিকা আকাশের রাকা

 মুখরিত উপবন৷

কৃষ্ণচূড়া রাধাচূড়া

 মেতেছে আজ রঙের খেলায়,

অজ্ঞাত কার কোমল ছোঁয়ায়

 সুপ্তি ভাঙ্গল দূর অবেলায়!

সম্ভাবনাময় কুঁড়ি গুলি চায়

 পূর্ণ প্রস্ফুটন,

বসন্তের একান্ত অভিপ্রায়

 হোক রূপায়ণ৷

 

করবী-কামিনী নয় অভিমানী

 বসন্তে তারা হাসে,

আজ মধুমাসে চৈতি হাওয়ায়

 ফুলের সুরভী ভাসে৷

অশোকে-পলাশে কি উচ্ছ্বাসে

 রঞ্জিত করে বন,

কাঞ্চন বনে কোকিলের গানে

 আবিষ্ট তনু মন৷

নব কিশলয় সবুজ ভূষণে

 উজ্জীবিত উদ্যান,

পাতা ঝরে যাওয়া শীতের তরু

 ভুলে গেছে অভিমান!

অলি-প্রজাপতি বাসন্তী অতিথি

 বকুলের আবাহনে,

সৌরভ তার মৃদু সমীরণে

 বয়ে আনে বাতায়নে৷

 

মাধবীলতার গোপন কথা

 শুনিতে আসে ভ্রমর,

শিমুল-পারুল স্বাগত জানাতে

 খুলিয়া রেখেছে দোর৷

রঙের খেলায় ফুলের মেলায়

 পূর্ণিমা চাঁদ হাসে,

মধুপ-গুঞ্জরণ পুলকিত মন

 মহুয়া ফুলের বাসে৷

আম্রমুকুলে ঢেকেছে রসাল

 জগৎ জোড়া সুনাম,

বৈভবে ভরা ঋতুরঙ্গে ধরা

 স্রষ্টাকে জানাই প্রনাম৷

বেগুণ গাছও বিরিক্ষি

Baba's Name
শ্রী প্রভাতরঞ্জন সরকার

‘‘যত্র বিদ্বজনো নাস্তি শ্লাঘ্যস্তত্রাল্পধীরপ্৷

নিরস্তে পাদপে দেশে এরণ্ডহপি দ্রুমায়তে৷৷’’

যেখানে সত্যিকারের বিদ্বান নেই সেখানে অল্পজ্ঞ ব্যষ্টিও শ্লাঘ্য অর্থাৎ বরণীয় রূপে গণ্য হন৷ যেমন যে দেশে বৃক্ষ নেই সে দেশে এরণ্ড (রেড়ির গাছ) বৃক্ষরূপে সম্বোধিত হয়ে থাকে৷ ওপরের কথাটির কী জুৎসই বাংলা হবে একদিন আমি তা ভাবছিলুম৷ ভাবতে ভাবতে চলেছি হুগলী জেলার বেলুন গ্রামের পাশ দিয়ে৷ সবে সন্ধ্যে হয়েছে৷ হঠাৎ দেখি দীর্ঘকায় দুই নারী নাকি সুরে চিৎকার করছে---একজনের হাতে আঁশবটি৷ অন্যের হাতে মুড়ো ঝাঁটা৷ তাদের নাকি সুরে বুঝলুম তারা মানবী নয়---পেত্নী৷ কথা শুণে মনে হ’ল তারা দুই জা৷

ছোট জা বলছে আমার সোঁয়ামীর মাস যেঁতে আয় তিন হাজার টাকা৷ আর ভাঁসুর ঠাঁকুরের মাত্তর দু হাজার টাকা৷ অথচ একবেঁলা আঁমাকে রান্না ঘরে বসে কাঁঠের উনুনে তাঁত সঁইতে হয়৷ তাঁ আঁমি কেঁন কঁরব? আঁমি আঁর হেঁসেল ঠেলতে পাঁরব না৷ ওঁই সঁময়টা হঁয় সিনেমা দেঁখতে যাঁব না হঁয় কোন শ্যাঁওড়া গাঁছে চঁড়ে খানিকটা হাঁওয়া খেয়ে আসব৷ তোঁর সোঁয়ামির আঁয় কঁম৷ তুই দু’বেলা হাঁড়ি ঠেঁলবি৷

বড় জা বলছে---‘কঁথায় বঁলে, যেঁখানে বড় গাঁছ নেই সেখানে বেঁগুণ গাঁছ ও বিরিক্ষি৷ (কথাটা আমি সঙ্গে সঙ্গে নোট বুকে টুকে নিলুম৷ বুঝলুম---এইটাই ‘এরণ্ডহপি দ্রুমায়তে’ কথাটার জুৎসই বাংলা)৷ তুঁই হাঁ-ঘরে হাঁ-ভাতে ছোঁট ঘঁরের মেঁয়ে---বাঁপের জঁন্মে এঁকসঙ্গে তিঁন হাঁজার টাঁকা দেঁখিসনি৷ এঁখানে এঁসে তাঁই দেঁখে ধঁরাকে সঁরা জ্ঞাঁন কঁরছিস৷ আঁজ থেঁকে আঁর পেঁত্নী বঁলে পঁরিচয় দিঁয়ে লোঁক হাঁসাসনি৷ তঁবুও যঁদি তিঁন হাঁজার টাঁকা সঁত্যিকারের আঁয় হোঁত! মাঁইনে তোঁ পাঁয় এঁক হাঁজার টাঁকা আঁর বাঁকীটা পাঁয় চোঁরাবাজারে হাঁসপাতালেঁর চাঁদর, তোঁয়ালে, ওঁষুধ, ফিঁনাইল বাঁইরে পাঁচার করে’৷ আঁজ তোঁর তিঁন হাঁজার টাঁকার শ্রাঁদ্ধ কঁরছি৷ এঁইসব চুঁরি আঁর পঁাঁচারের কঁথা টিঁকটিঁকি বাঁবুদের (ডিটেক্‌টিব্‌ মানে ইনটেলিজেন্স৷ ডিটেকটিব শব্দ থেকেই টিকটিকি শব্দ এসেছে) বঁলে দোঁবে৷ তাঁরা গঁলায় গাঁমছা বেঁধে তোঁর মুঁখপোড়া সোঁয়ামীকে জেঁলে ঠেঁলে দেঁবে’৷

পেত্নীর ছোট জা তখন বললে---‘তোঁর যাঁ ইঁচ্ছে কঁরগেঁ যাঁ৷ আঁমি আঁশ বঁটি দিঁয়ে টিকটিকির ন্যাঁজ কেঁটে দোঁব৷ আঁমার সোঁনার চাঁদ বাঁছাটা এঁকদিনও মাঁছের মুঁড়ো চোঁখে দেঁখতে পাঁয় নাঁ, আঁর তোঁর ভুঁতুম পেঁচা উনুন মুঁখোটা রোঁজ রোঁজ রুঁই মাঁছের মুঁড়ো চিঁবোচ্ছে৷ এঁ আঁর আঁমার সঁহ্য হঁয় নাঁ৷ নাঁরায়ণ! আঁজই এঁর এঁকটা হেঁস্তনেস্ত কঁরে দাঁও৷’

পেত্নী দু’জন এতক্ষণ দেখতে পায়নি৷ আমি আরও কাছে আসায় আমার জুতোর শব্দে তাদের হুঁশ হলো৷ তারা আমার দিকে তাকিয়ে দেখে তাদের দশ হাত লম্বা জিভ দাঁতে করে কেটে তাদের লজ্জানুভুতি জানাল৷ আমি বললুম---‘অত বেশী দাঁতে চাপ দিসনি৷ জিভ কেটে খসে যাবে৷ তখন ঝগড়া করা জন্মের মত বন্ধ হয়ে যাবে---বোবা হয়ে যাবি’৷ তখন তারা জিভ ভেতরে ঢুকিয়ে নিয়ে মাথায় প্রকাণ্ড ঘোমটা টেনে দিল৷ ঘোমটা এত লম্বা করে টানলে যে ঘোমটার জেরে পিঠ হয়ে গেল একেবারে ফাঁকা গড়ের মাঠ৷

আমি আবার বললুম---তোদের এত লজ্জার কি আছে রে! এত লম্বা ঘোমটা টানলে যে দেখতে পাবি না৷’

তারা তখন ঘোমটা সরিয়ে ফেললে আর বললে---‘পেত্নী হঁলেও আঁমরা তোঁ মাঁনুষ---আঁমরাও তোঁ তোঁমার মেঁয়ে৷ তাঁই ঘোঁমটা আঁর দিঁলুম নাঁ’৷

আমি বললুম---‘পিঠটা বরং ভালো করে ঢাক৷ শীত কম লাগবে৷

আমি বললুম---‘এই ভর সন্ধ্যেয় তোরা ঝগড়াঝাঁটি করছিস, তোদের বাড়ীর পুরুষ মানুষেরা গেল কোথায়’?

ওরা বললে---‘আঁমরা যঁখন ঝঁগড়াঝাঁটি কঁরি তঁখন ওঁরা এঁকটু তঁফাতে থাঁকে, ধাঁরে কাঁছে আঁসে না৷ লঁড়াই থেঁমে যাঁওয়ার পঁর তাঁরা লাঁঠিসোঁটা নিঁয়ে ইঁউনিফরম্‌ পঁড়ে আঁমাদের কাঁছে এঁসে হঁম্বিতঁম্বি কঁরে বঁলে---আঁগে খঁবর কাঁহে নেঁহি দিঁয়া হ্যাঁয়? ক্যাঁ হুঁয়া? সেঁই জঁন্যেই তুঁমি বাঁড়ির পুঁরুষদের কাঁউকেই দেঁখতেও পঁচ্ছো না’৷ আমি বললুম---‘অনেকক্ষর ধরে চিৎকার করে তোদের গলা শুকিয়ে গেছে৷ খানিকক্ষণ গাছে চড়ে একটু জিরিয়ে নে৷’

ওরা দুজনেই সামনে তালগাছটাতে তরতরিয়ে উঠতে গেল৷ আমি বললুম---‘‘দুজনেই একটা তালগাছে উঠিসনি৷ তাহলে গাছে উঠে ধস্তাধস্তি করে ধাক্কাধাক্কি করে দুজনেই নীচে পড়ে হাড়গোড় ভেঙ্গে প্রাণ হারাবি৷ মানুষ ছিলি---একবার ম’রে পেত্নী হয়েছিস আর একবার যদি মরিস তোদের কী গতি হবে আমি ভেবে কুল-কিনারা পাচ্ছি না৷

তাই শান্তিতে যদি জিরিয়ে নিতে চাস তবে তোরা দুজনেই দুটো আলাদা আলাদা গাছে উঠে বস’৷ ওরা তখন দুটো আলাদা গাছে উঠে বসল৷ আমার জরুরী কাজ ছিল৷ ট্রেন ধরবার জন্যে তাড়াতাড়ি পাণ্ডুয়া স্টেশনের দিকে চলে চলেছি৷ পথ চলতে চলতে অনেক দূর থেকে কাণে ভেসে আসছিল তালগাছের ওপর থেকে পেত্নী গাওয়া রাশব রাগীনিতে ‘ফিল্মী গানেঁ’

যাইহোক, শিখলুম নোতুন কথা ঃ যেখানে বড় গাছ নেই সেখানে বেগুণ গাছও বিরিক্ষি৷