সম্পাদকীয়

ত্রিস্তরীয় উন্নতিই প্রকৃত উন্নতি

আচার্য মন্ত্রসিদ্ধানন্দ অবধূত

মানুষের অস্তিত্ব ত্রিস্তরীয়---শারীরিক, মানসিক ও আত্মিক৷ মানুষের উন্নতি মানে এই ত্রিস্তরীয় সামঞ্জস্যপূর্ণ উন্নতি৷ এই সামঞ্জস্যপূর্ণ উন্নতি যদি না থাকে তাহলে উন্নতির পরিবর্তে অবনতি হবে৷ বর্তমানে বিজ্ঞান-প্রযুক্তির হাত ধরে বা আধুনিকতার ছাপ মেরে যে বিপুল উন্নতির বড়াই আমরা করি এই তথাকথিত উন্নতি যে অনেক জটিল প্রশ্ণের সম্মুখে আমাদের দাঁড় করিয়ে দিয়েছে, তা আজ কেউ অস্বীকার করতে পারবেন না৷

বসন্তোৎসব

আচার্য মন্ত্রসিদ্ধানন্দ অবধূত

বসন্তোৎসব সারা ভারতের উৎসব–উত্তর ভারতে ‘হোলি’, বিহার অঞ্চলে ‘ফাগুয়া’ ও বাংলায় ‘দোলযাত্রা’৷ আদিতে এই উৎসব ছিল মূলতঃ আর্যদের৷ প্রাচীন আর্যদের বাসভূমি ছিল মধ্য এশিয়ায়৷ এই অঞ্চলটা ছিল ভীষণ ঠাণ্ডা৷ সারা শীতকাল কেবল বরফ পড়তো, এটা ছিল আর্যদের দুঃসহ কষ্টের কাল৷ নিদারুণ ঠাণ্ডায় মানুষ জবু–থবু হয়ে মরার মত পড়ে থাকতো, কোন কাজকর্ম করতে পারতো না৷ এই শীতকালটা যখন বিদায় নিত, আর্যরা তখন আনন্দে উৎসবে মেতে উঠতো৷ ‘উৎ’ মানে আনন্দে লাফিয়ে ওঠা আর ‘সব’ মানে ‘জন্মগ্রহণ করা’৷ আক্ষরিক অর্থেই বসন্তের আগমনে আর্যরা প্রাণচঞ্চল হয়ে উঠতো, হৈ–হুল্লোড়, ও কর্মচাঞ্চল্যে মেতে উঠতো৷

অর্থনৈতিক গণতন্ত্রের প্রতিষ্ঠাই প্রকৃত উন্নয়নের মাপকাঠি

আচার্য মন্ত্রসিদ্ধানন্দ অবধূত

জিডিপি (গ্রস ডোমেস্টিক প্রডাক্ট) করে উন্নয়নের ঢাক পেটাচ্ছেন নেতামন্ত্রীরা৷ কিন্তু জিডিপির সঙ্গে আমজনতার সম্পর্ক কতটুকু৷ জিডিপি কমা, বাড়ার সঙ্গে দেশের সার্বিক বিকাশ নির্ভর করে কি? পুঁজিবাদী দুনিয়ায় যেখানে সম্পদের সিংহভাগ দখল করে বসে থাকে  মুষ্টিমেয় কয়েকজন সেখানে জিডিপি দেখিয়ে উন্নয়নের দাবী চরম মিথ্যাচারিতা৷

বাংলা ভাষাকে স্ব– মর্যাদায় প্রতিষ্ঠা করার শপথ নিন

আচার্য মন্ত্রসিদ্ধানন্দ অবধূত

বাঙালী জনগোষ্ঠীর কাছে এক গর্বের দিন হ’ল ২১শে ফেব্রুয়ারী৷ ১৯৫২ সালে ২১ ফেব্রুয়ারী পূর্ব বাঙলার অর্থাৎ তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের রাজধানী ঢ়াকায় উর্দু ভাষার পরিবর্তে বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রীয় ভাষার মর্যাদা দিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা তীব্র প্রতিবাদ করেছিল৷ কিন্তু পাকিস্তানের উর্দু সাম্রাজ্যবাদীদের প্রতিভূ ঢ়াকার শাসক গোষ্ঠী ছাত্রদের সেই আন্দোলনকে স্তব্ধ করে দিতে নির্মমভাবে গোলাগুলি চালিয়ে বহু ছাত্রকে মারাত্মকভাবে আহত করে ও বেশ কয়েকজনকে হত্যা করে৷ নিহতদের মধ্যে জব্বর, সালেম, রফিক, বরকত ও শফীউর ছাড়া আরো অনেকেই ছিলেন৷ এই ভাষা আন্দোলন বহু বছর ধরে চলে৷ শেষে ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ নামে পূর্ব পাকিস্তান স্বাধ

অমর ২১শের শপথ

আচার্য মন্ত্রসিদ্ধানন্দ অবধূত

১৯৫২ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারী বাঙলার ইতিহাসে–এখন আর শুধু বাঙলার ইতিহাসে নয় পৃথিবীর ইতিহাসেই এক স্মরণীয় দিন৷

পাপশক্তির বিরুদ্ধে সংগ্রামে শপথ নেওয়ার দিন নীলকন্ঠ দিব

আচার্য মন্ত্রসিদ্ধানন্দ অবধূত

১২ই ফেব্রুয়ারী ‘নীলকণ্ঠ’ দিবস৷ আনন্দমার্গের ইতিহাসে এক স্মরণীয় দিন৷ আজ থেকে ৪৪ বছর আগে ১৯৭৩ সালের ঘটনা৷ পটনার বাঁকিপুর সেন্ড্রাল জেলে মিথ্যা অভিযোগে বন্দী মার্গগুরু শ্রীশ্রীআনন্দমূত্তিজীক্ হত্যার উদ্দেশ্যে ওষুধের নামে প্রাণঘাতী মারাত্মক বিষ প্রয়োগ করা হয়৷ কিন্তু মার্গগুরুদেব সেই বিষকে আত্মস্থ করে তাঁর প্রতিক্রিয়া নষ্ট করে দেন৷

মার্গগুরুদেব এই বিষ প্রয়োগের বিচার বিভাগীয় তদন্তের দাবী করেন৷ সরকার তাঁর দাবীতে কর্ণপাত করেনি৷ এরপর ১লা এপ্রিল (১৯৭৩) তিনি এই দাবীতে অমরণ অনশন শুরু করেন৷ এই ঐতিহাসিক অনশন চলেছিল পাঁচ বছর চার মাস দুই দিন৷

মোদীর বাজেটের লক্ষ্য কর্র্পেরেট উন্নয়ন

আচার্য মন্ত্রসিদ্ধানন্দ অবধূত

গত বুধবার কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমন সংসদে যে বাজেট পেশ করেছেন তাতে আখেরে  লাভ হবে কর্র্পেরেট জগতের লোকেদের৷ অর্থাৎ বড় লোকেদের৷ তাদের মুনাফার পরিমান লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়বে মোদী জমানায়৷ এই বাজেটে আমজনতা তথা গরীব মধ্যবিত্তদের স্বস্তি দেওয়ার জন্য কিছুই নেই৷ শিল্পক্ষেত্রেও  আশা যোগাতে ব্যর্থ এই বাজেট৷ সরকারী কোষাগারের ঋণ কমিয়ে সরকারের নিজের আয় বাড়ানোর ও ঘাটতি কমানোর কোন বাস্তবসম্মত দিশা নেই বাজেটে৷  মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, মূল্যবৃদ্ধি কমানোও আর্থিক মন্দা থেকে উত্তরন ও বেকারত্ব দূরীকরণে বাজেটে কোন উচ্চবাচ্য নেই৷ অর্থমন্ত্রীর মুখ থেকে কোন আশাব্যঞ্জক কথাও শোণা যায়নি৷ সরকারী সম্পত্তি না বিক

নেতাজীর চিন্তাধারার প্রাসঙ্গিকতা

আচার্য মন্ত্রসিদ্ধানন্দ অবধূত

আমাদের ছেলেবেলায় নেতাজীর কয়েকটি বাণী মহত্তর জীবনাদর্শের পথে এগিয়ে চলবার ক্ষেত্রে অফুরন্ত প্রেরণার উৎস হিসেবে কাজ করত৷ নেতাজী জয়ন্তীর এটাই ছিল সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি৷ বর্তমানেও নেতাজী জয়ন্তী পালন করা হয়, এমনি বিভিন্ন মহাপুরুষের  জন্মজয়ন্তী ঘটা করে’ পালন করা হয়, নাচ-গান-বত্তৃণতা-মিছিলের  আয়োজন করা হয়, কিন্তু প্রায়ই দেখা যায় তাঁদের জীবন ও বাণীকে অন্তর দিয়ে উপলদ্ধি করার চেষ্টা করা হয় না৷ কে বা কারা কত বড় করে’ কত জাঁকজমক করে অনুষ্ঠান করল, তারই প্রতিযোগিতাটাই এখন মুখ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে৷ কাদের মিছিল কত বড় হয়েছে এখন সেটা নিয়েই সবাই মাথা ঘামায়৷ তোতাপাখির মত বত্তৃণতা দিয়ে বক্তারা শেষে একটা আত্মতৃপ্তি অনুভব

বর্তমান সমাজের এক সর্বনাশা ব্যাধি----ধন-বৈষম্য

আচার্য মন্ত্রসিদ্ধানন্দ অবধূত

কয়েক বছর আগে বিশ্ব ব্যাঙ্কের এক সমীক্ষায় বলা হয়, পৃথিবীতে আয় বৈষম্য ক্রমশই বৃদ্ধি পাচ্ছে৷ আরও বলা হয়েছে বিশ্বে দারিদ্র্য সীমারেখার নিম্নে রয়েছে ৭৬ কোটি ৭০ লক্ষ মানুষ৷ আজ পৃথিবীর প্রায় এক শতাংশ মানুষের হাতে কুক্ষিগত পৃথিবীর ৫০ শতাংশের বেশী সম্পদ৷ সমাজে দারিদ্র্য সীমারেখার নিম্নে যারা বসবাস করছে তাদের অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নতি না হলেও গত দশ বছরে ভারতে কোটিপতিদের সম্পদ বেড়েছে দশ গুণ৷ এক বছরে ভারতের শীর্ষস্থানীয় পুঁজিপতিদের সম্পদ বৃদ্ধির পরিমাণ ৫০,৪০০ কোটি টাকা৷ আর প্রতিদিনই এক-এক জনের গড়ে সম্পদ বৃদ্ধির পরিমাণ ১.৩৮ কোটি টাকা৷ তাই দেখা যাচ্ছে পুঁজিপতিদের সম্পদ লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে, অথচ কোটি কোটি ম

সমাজ ও আধ্যাত্মিকতা

আচার্য মন্ত্রসিদ্ধানন্দ অবধূত

আজকের সমাজের বুদ্ধি -জীবীদের  মধ্যে যাঁরা  নিজেদের প্রগতিশীল  বলে জাহির করেন, তাঁরা আদর্শ সমাজ সংরচনায় আধ্যাত্মিকতার যে একটা অতি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা আছে, তা সাধারণতঃ স্বীকার করতে চান না৷ তাঁরা আধ্যাত্মিকতাকে মনে করেন একটা অন্ধবিশ্বাস  বা কুসংস্কার৷ আসলে ‘আধ্যাত্মিকতা’  সম্পর্কে তাঁদের ধারণাটাই পুরোপুরি ত্রুটিপূর্ণ৷